Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

এই তরুণেরা গোটা দেশের অনুপ্রেরণা হোক

প্রযুক্তির প্রভাব বিস্তারে আমাদের জীবন থেকে চিরায়ত অনেক অভ্যাসই হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় বই পড়া। বই পড়ার প্রতি আগের মানুষের ঝোঁক এখন তেমন দেখা যায় না। সময়ের পরিক্রমায় এলাকায় এলাকায় গ্রন্থাগারচর্চার দিনগুলোও হারিয়ে গেছে।

এরপরও বই পড়া নিয়ে কিছু প্রচেষ্টা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। যেমনটি আমরা দেখি পাবনার বেড়া উপজেলায়। সেখানে স্কুলশিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে কিছু তরুণ ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা সেখানে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন, যা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দুটি ভ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার। পালা করে ভ্যান দুটি বেড়া পৌর এলাকা ও উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। ভ্যানের ওপরের অংশে সুদৃশ্য ছাউনি আর ছাউনির নিচে কয়েকটি তাক। এসব তাকে সাজিয়ে রাখা নানা ধরনের বই। টিফিনের সময় শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে বই নিয়ে পড়ে। কেউবা আবার ওই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের খাতায় নাম, রোল নম্বর লিখে বই বাড়িতে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে ব্যতিক্রম এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনের গেমসের আসক্তি দূর করতে এবং বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে এক দল উদ্যমী তরুণ-তরুণীর এমন প্রয়াস। মূল উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় স্কুল-কলেজে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। কিন্তু ফেলে আসা গ্রাম ও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কথা তাঁরা ভুলে যাননি। অনুজ শিক্ষার্থীদের মানসগঠন ও জ্ঞানচর্চার প্রতি তাঁরা ঠিকই চিন্তিত হয়েছেন। ফলে এমন উদ্যোগ তাঁরা নেন।

মূলত ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে তরুণেরা ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের উদ্যোগটি গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালে সরকারি বেড়া বিপিন বিহারী উচ্চবিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জনকল্যাণমুখী এ সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। সে সময় তাঁরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জনসেবামূলক নানা ধরনের কাজ শুরু করেন। শুরুর দিকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসংক্রান্ত সহায়তাসহ দুস্থদেরও নানাভাবে সহায়তা করেছে সংগঠনটি। সেই সংগঠন ধীরে ধীরে আরও বড় হয়েছে, বর্তমানে এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বেড়া উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।

সংগঠনচর্চা কীভাবে একটি সমাজকে বদলে দিতে পারে, তার বহু উদাহরণ আছে। এলাকায় এলাকায় সংগঠনচর্চাও এখন অতীত হয়ে গেছে বলা যায়। সেই সংগঠনচর্চাকেও সাফল্যের সঙ্গে ফিরিয়ে এনেছেন বেড়ার এই তরুণেরা। তাঁদের উদ্যোগ প্রশাসনকেও আকৃষ্ট করেছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে এ পাঠাগার তৈরিতে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়। আমরা বেড়ার এই তরুণদের সাধুবাদ জানাই, সেই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও। এ উদ্যোগ উদাহরণ হয়ে উঠুক দেশের অন্যান্য এলাকায়ও।