Thank you for trying Sticky AMP!!

মশা নিয়ন্ত্রণে মেয়রদের ব্যর্থতার জবাব কী

বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের যে সংখ্যা, তাতে আরেকটি স্বাস্থ্যগত দুর্যোগের আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে মৌসুম শুরুর আগেই জুন মাসে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, তাতে জনস্বাস্থ্যবিদেরা এখনই মহামারি রোধে যে প্রস্তুতি নিতে হয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে, এবার প্রাক্‌-বর্ষা মৌসুমে ঢাকায় এডিস মশার লার্ভা গত বছরের বর্ষা মৌসুমের তুলনায় ৪-৫ শতাংশ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নির্মূলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যকর তৎপরতা

নেই। ২০১৯ সালের ডেঙ্গুর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে কিছুই শিক্ষা নেননি সিটি মেয়ররা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও গত বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৯৭৮ জন। এ সময় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৭ জন। অথচ গত বছর সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছরেও প্রথম ছয় মাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯ জন, মৃত্যু হয়েছিল ১ জনের। ২০১৯ সালে দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সে বছর প্রথম ছয় মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২০৮ জন।

প্রথম ছয় মাসের বিপজ্জনক পরিসংখ্যানই বলে দেয় এবারের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে ভরা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এবং তাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর কতটা চাপ তৈরি হতে পারে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও এ বছর ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গুর এই চাপ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি কী? নাকি হাসপাতালের একটি শয্যা, আইসিইউ কিংবা প্লাটিলেটের জন্য এবারও কি নাগরিকদের হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে? ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর অথবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্তদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে যদি ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হয়, তাহলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

মূল প্রশ্নটি হলো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও নাগরিকের স্বাস্থ্যর ওপর এত বড় ঝুঁকিটা কেন তৈরি করা হলো? ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এর দায় এড়াবে কীভাবে? এ বছর প্রাক্‌-বর্ষা মৌসুমে গত বছরের বর্ষা মৌসুমের থেকেও কেন এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেল? ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে এডিস মশার বিস্তার ঠেকানো ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ শুধু বর্ষা মৌসুমের বিষয় নয়, সারা বছরের কার্যক্রম।

দুই যুগের বেশি সময় ধরে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও এখন পর্যন্ত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও সমন্বিত কোনো কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে শুধু লোকদেখানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আবার প্রকোপ কমে গেলে সবকিছু থেমে যায়। সারা বছর ধরে বিজ্ঞানসম্মত কর্মপদ্ধতি এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা ছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ নিছক বাগাড়ম্বর ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।

নাগরিকেরা কেন তাঁদের অসুস্থতা কিংবা জীবনের বিনিময়ে মেয়রদের ব্যর্থতার দায় শোধ করবেন? ডেঙ্গু চিকিৎসার সর্বাত্মক প্রস্তুতি এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।