Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

অভিযুক্তরা রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হচ্ছেন

ক্যাসিনো-কাণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামি সেলিম প্রধানের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখানোর খবরটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপকই বলতে হবে।

২০১৯ সালে যখন ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চলছিল, তখন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দেশবাসীকে এই ধারণাই দিয়েছিলেন যে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হবে। ক্যাসিনো–কাণ্ডের মূলোৎপাটন করা হবে। কিন্তু পাঁচ বছর পরও অধিকাংশ মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় এবং একের পর এক আসামির জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় সেই অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনের তিন মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

ইসমাইল হোসেন ছাড়াও ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে পাঁচ বছর আগে যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাজী আনিসুর রহমান, এ কে এম মমিনুল হকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে বিচারিক আদালতে মাত্র পাঁচটি মামলার রায় হয়েছে। এতে সাজা হয়েছে প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি এনামুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়াসহ কয়েকজনের। ইসমাইলের কোনো মামলার বিচারকাজ শেষ না হলেও তিনি জামিনে আছেন ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট থেকে। তাঁর পক্ষে যুবলীগের কর্মীরা মিছিল করেছেন ও পোস্টার ছেড়েছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হকের বিরুদ্ধে আনা মামলাও ঝুলে আছে।

মানি লন্ডারিং মামলায় জি কে শামীমের ১০ বছর এবং ক্যাসিনো-কাণ্ডে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের পৃথক দুই মামলায় আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা দুই ভাই এনামুল, রুপনসহ ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

ক্যাসিনো–কাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, মামলাগুলো যাতে বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়, সে জন্য রাষ্ট্রপক্ষের উদ্যোগ আগেও ছিল, এখনো আছে। ২০১৯ সালে দায়ের করা মামলা ২০২৪ সালের এপ্রিলেও তদন্তকাজ শেষ না হওয়া কিংবা শুনানি চলতে থাকা প্রমাণ করে না তাঁদের যথাযথ উদ্যোগ আছে।

ক্যাসিনো-কাণ্ডে চার বছর সাজা খাটা সেলিম প্রধান আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে রূপগঞ্জ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের রায়ে আছে, কোনো ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। যদিও সেলিম প্রধান দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক এবং তিনি এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন।

সেলিম প্রধান নির্বাচন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনই সিদ্ধান্ত দেবে। কিন্তু ক্যাসিনো-কাণ্ডের মামলাগুলো যে এত বছরেও নিষ্পত্তি হলো না, সেই প্রশ্নের জবাব কী? ক্যাসিনো-কাণ্ডের হোতারা যে কেবল বিচার এড়িয়ে থেকেছেন তা-ই নয়; তাঁদের নতুন করে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। এটা সরকারের পূর্বঘোষণারই বরখেলাপ নয়, আইনের শাসনেরও পরিপন্থী।