Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডের মানে কী

তালগাছ প্রকৃতিতে কতটা উপকারী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কদিন পরপর তালগাছ নিধনের ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি—সবাই যেন গাছটি নিধনে তৎপর। গাছ নিধনে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর উৎসাহী ভূমিকার কথা তো আমাদের সবার জানাই আছে।

বগুড়ার আদমদীঘিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এমন কাণ্ডই করেছে। সেখানে বিদ্যুতের লাইন টানতে গিয়ে সেখানকার অনেকগুলো তালগাছের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি তালগাছ মরেও গেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার নশরতপুর রেলস্টেশনের উত্তর পাশে তালগাছগুলোর অবস্থান। এ গাছগুলোর সঙ্গে বিজড়িত আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি। ১৯৭১ সালে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ের নিদর্শন হিসেবে এ তালগাছগুলো রোপণ করেন।

৭১টি তালগাছ মাথা উঁচু করে থাকবে, সেই ইচ্ছায় রোপণ করা হয় শতাধিক তালবীজ। সেখান থেকে টিকে থাকে ৭৫টি তালগাছ। সর্বশেষ সেখানে ৪০টি তালগাছ বেড়ে ওঠে। কিন্তু সেসব গাছেরও আর টিকে থাকা হচ্ছে না। একাত্তরের বিজয়ের নিদর্শনের ওপর আঘাত হেনেছে বিদ্যুৎ বিভাগের অযাচিত সিদ্ধান্ত।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য তালগাছের ডাল কেটে দেওয়া হয়েছে। ফলে গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। বহুবার বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাধা দিলেও কেউ কর্ণপাত করেননি। গাছগুলো লাগানো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে এখন আর বেঁচে নেই।

বেঁচে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যখন বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তালগাছ রোপণ করছে, সে সময় তালগাছ কেটে নষ্ট করা চরম অপরাধ। তা ছাড়া এ গাছগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাগানো, বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।

তালবীজ রোপণ করা থেকে পরিণত গাছ হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় লাগে। তাই অনেকে সহজে তালবীজ রোপণ করতে চান না। ফলে গ্রামগঞ্জ থেকে তালগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। তা ছাড়া আগের মতো তালবীজও পাওয়া যায় না। সেখানে এতগুলো তালগাছ মেরে ফেলার আয়োজন করা হবে, তা কোনোভাবেই মানা যায় না।

সেখানকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালগাছের বিষয়টি আমি জেনেছি। দ্রুত আমি ওই এলাকায় যাব এবং বিষয়টি তদন্ত করব।

কারণ, গাছ মেরে ফেলার বিষয়টি আমাকেও খুব ব্যথিত করেছে।’ আমরা আশা করব, তদন্ত করে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। স্থানীয় বন বিভাগের সহায়তা নিয়ে তালগাছগুলো কীভাবে বাঁচানো যায়, সেই ব্যবস্থাও করবেন। আমরা তাঁর ওপর আস্থা রাখতে চাই।