Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কেন

নদী, পাহাড় ও বন রক্ষায় জেলা প্রশাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজই তো সেসব নিয়ে। কিন্তু বাস্তবে প্রায়ই আমরা দেখি, নদী, পাহাড়, বনভূমি রক্ষায় এসব কর্তৃপক্ষ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

এমনকি নানা মহলকে সুবিধা দিতে গিয়ে প্রকৃতি বিনষ্টেও জড়িয়ে পড়ে তারা। যেমনটি আমরা দেখছি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। সেখানে জাহাজভাঙা কারখানা করার জন্য কোহিনুর স্টিল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।

সেই কারখানা চালু করার জন্য কোম্পানিটিকে পরিবেশগত ছাড়পত্রও দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। একটি বনভূমি ধ্বংস করতে দায়িত্বশীল সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো কি তাহলে একজোট হলো?

তবে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, এ দুই প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সরকারের আরেকটি কর্তৃপক্ষ বন বিভাগ। বনভূমি ইজারা বাতিল করতে উপকূলীয় বন বিভাগ তাদের আইনি ও প্রশাসনিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ইজারাকে ‘পাকাপোক্ত’ করতেই এই পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত শর্তাবলি পূরণ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোহিনুর স্টিল তা করেনি। এখন পরিবেশগত ছাড়পত্র বাতিলের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকেও চিঠি দিয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগ। এর আগে সেখানে কেওড়াবাগানের গাছ কাটার অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট ও ২৫ সেপ্টেম্বর উপকূলীয় বন বিভাগ কোহিনুর স্টিলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে।

সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর ও তুলাতলির ওই বনভূমি রক্ষায় শুরু থেকেই আইনি লড়াই করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। তাদের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত দুই বছর আগে সেখানকার ইজারা বাতিল করে বন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তা না মেনে তথ্য গোপন করে ঠিকই একই গোষ্ঠীকে বনভূমিটি ইজারা দেওয়া হয়। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এখন সেখানে জাহাজভাঙা কারখানা তৈরির কাজও শুরু করেছে কোহিনুর স্টিল। কোম্পানিটির মালিক আবুল কাশেমের লোকজন পুরো এলাকা পাহারা দিচ্ছেন।

আবুল কাশেমের দাবি, নিয়ম মেনে সব করা হচ্ছে। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের ভাষ্য, প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ভূমি উন্নয়ন করেছে। অন্য শর্তগুলো পূরণ করবে আস্তে আস্তে।

তাই ছাড়পত্র পেয়েছে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা, বন বিভাগের মামলা, পরিবেশবাদীদের আপত্তি সত্ত্বেও বনভূমিটি ইজারা দেওয়ার বিষয়টি নানা প্রশ্ন তৈরি করে। এ জন্য কি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত নয়? ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ড এলাকায় নানা শিল্পকারখানার কারণে সেখানকার বনাঞ্চল হুমকির মুখে। অতএব, এই প্রশ্নবিদ্ধ ইজারা অবিলম্বে বাতিল করা হোক।