Thank you for trying Sticky AMP!!

আইন করলেও তা যথার্থ হওয়া চাই

>মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকরণ অপরাধ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই আইনের খসড়া সম্পর্কে কিছু মতামত দিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শরিফুজ্জামান
সুলতানা কামাল

প্রথম আলো : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ আইনের গুরুত্ব কতটুকু?
সুলতানা কামাল : মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেউ কোনো বিভ্রান্তি ছড়াক বা বিকৃত তথ্য দিক, তা আমরা চাই না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পবিত্রতম আবেগের বিষয়। এ বিষয়ে আইন করার আগে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার আছে। আমার মত হচ্ছে, আইন যদি করতেই হয়, তা যথার্থ হতে হবে। দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে যথেষ্ট কঠোর আইন আছে। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োগ দুর্বল। ওই তালিকায় নতুন একটি আইন যুক্ত হবে, না এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর আইন হবে, সেটি ভেবে দেখার বিষয়।
প্রথম আলো : আইন করে বা শাস্তি দিয়ে কি অপরাধ রোধ করা যায়?
সুলতানা কামাল : অপরাধ রোধ করার জন্য অবশ্যই শাস্তিমূলক আইনের প্রয়োজন হয়। তবে আইন বা শাস্তির চেয়ে মানুষের চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে পরিবর্তন আনাটা জরুরি। আমরা ‘পিউনিটিভ সোসাইটি’ চাই না। এখনকার বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রত্যেকের চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতিতে মুক্তিযুদ্ধ সঞ্চারিত করা। নতুন আইন করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতিতে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ওপর কোনো প্রভাব ফেলা যাবে বলে মনে হয় না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা সেই একাত্তরের মতোই আইন, নিয়ম-নীতি, মূল্যবোধ—সবকিছুকে উপেক্ষা করে তাদের হীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ আইন করে এদের সহজে নিবৃত করা যাবে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। অন্যদিকে আইনটির অপব্যবহারের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হয়রানির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যক্তিকে মামলা করার সুযোগ দেওয়া হলে এই অপরাধ নির্মূল হবে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। বরং এতে হয়রানির আশঙ্কা থেকে যাবে।
প্রথম আলো : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঠেকানোর বিকল্প হিসেবে আইন ছাড়া আর কী করণীয় আছে?
সুলতানা কামাল : মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মানুষের আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ ধরে রাখার দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকেই নিতে হবে। রাজনৈতিক হীনস্বার্থে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের অস্তিত্বের জন্য কত গুরুত্ববহ, সেটি সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, একাত্তরে অধিকাংশ মানুষই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ছিল এবং স্বল্পসংখ্যক মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে।
প্রথম আলো : মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, নির্যাতিত নারীদের সংখ্যা ও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী? এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আইনে শাস্তির বিধান কীভাবে দেখেন?
সুলতানা কামাল : ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত নারীর সংখ্যা নিয়ে আমার কোনো রকম প্রশ্ন নেই। আগে কখনো এটা নিয়ে প্রশ্ন শুনিনি। এই প্রশ্ন সাম্প্রতিক সময়ের। এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই অপ্রাসঙ্গিক। কেউ তুললেও এটা বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য হবে না। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী মাস কয়েক আগে এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেরাই বিব্রত হয়েছেন বলে মনে হয়। মানুষ উল্টো তাঁদের সমালোচনা করেছে।
প্রথম আলো : আইনটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ও সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কি না।
সুলতানা কামাল : মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় এখন পর্যন্ত উদ্ঘাটিত হয়নি। এখনো নতুন নতুন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। আইনের ফলে যদি কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তাহলে এ নিয়ে কেউ কথা বলতে চাইবে না। তেমন পরিবেশ কাম্য নয়। গুটি কয়েক মুক্তিযুদ্ধবিরোধীকে শায়েস্তা করতে গিয়ে আপামর মানুষকে সরকার এই ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে চাইবে বলে মনে হয় না।
প্রথম আলো : মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল কখন বলে মনে করেন?
সুলতানা কামাল : আমি মনে করি, বড় পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বায়ান্ন থেকে একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয় পর্যন্ত বিস্তৃত। আর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, যেটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, সেটি আমি ধরি ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত। আইনে ১ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়কাল ধরার যুক্তিটা আমার কাছে অস্পষ্ট।

আরও পড়ুন: