করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নিয়মকানুনের অদলবদল ঘটছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই বদল সম্পূর্ণভাবে পরিলক্ষিত। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষিত হয়, যেটি এখনো চলমান।
করোনাভাইরাস থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়ায় সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, সেই জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ঘরে বসেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। সেশনজটকে এড়ানোর জন্য একাডেমিক পরীক্ষাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। তবে অনেক শিক্ষার্থী যাদের স্মার্টফোন নেই বা প্রযুক্তিগত নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তাদের কথা মাথায় রেখে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য। কম রেটে তাদের জন্য ইন্টারনেটের বিশেষ অফার চালু করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না, সেখানে অনলাইন ক্লাস অনেকটা স্বপ্নের মতো বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছে। সেই ক্ষেত্রে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অটো পাসের সিদ্ধান্ত অবশ্যই যৌক্তিক।
বিগত সব বছরের রেকর্ড ভেঙে পরিস্থিতির চাপে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। আর একই সঙ্গে তাদের ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে জেএসসি এবং এসএসসির ওপর ভিত্তি করে। বর্তমানে যে সমস্যা দেশের জনগণকে বিশেষত শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে উদ্গ্রীব করে তুলেছে, তা হলো ভর্তি পরীক্ষা। যা কোনোভাবেই এইচএসসি পরীক্ষার মতো বাতিলের সুযোগ নেই। কেননা, এখানে শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে অনলাইনকে যথাযোগ্য প্ল্যাটফর্ম মনে করছেন। যেটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মেধা যাচাই হবে না। সেখানে কারচুপির প্রচুর সুযোগ রয়েছে; শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কৌশলই গ্রহণ করুক না কেন। যারা সারা বছর পড়াশোনা না করে শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপেক্ষায় থাকে বা বন্ধুবান্ধবের ভরসায় দিন পার করে, তাদের কাছে অনলাইন পরীক্ষার প্রক্রিয়া একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা মেধাবী তাদের ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে ভবিষ্যৎ সাফল্য অর্জন থেকে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। যা মাথায় রেখে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার কথাই বলছে। তবে কেন্দ্রে পরীক্ষা হলে সঠিকভাবে মেধা যাচাই করা সম্ভব হবে না। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শ্রম আর স্বপ্নভঙ্গের বেশি আশঙ্কা থাকবে।
স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম বজায় রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়াই উত্তম বলে মনে করি। আশা করি, সবকিছু বিবেচনা করেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
*শিক্ষার্থী: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়