Thank you for trying Sticky AMP!!

কোটাধারীরা চাকরি পেয়ে যোগ্য ও মেধাবীদের উপহাস করেন

আমরা জানি, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে সারা দেশে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের (১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে) ঘোষণা দেন।

কিন্তু সেদিন সাধারণ ছাত্রদের সব দাবি মানা হয়নি। যদি মানা হতো, তাহলে আজ কিছু কোটা নামক বিষফোড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন অতিষ্ঠ করতে পারত না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল পাঁচটি। তার মধ্যে অন্যতম দুইটি হলো—
১. সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশের বেশি কোটা নয়
২. কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করা

তবে আমার প্রশ্ন, কোটা নামক অব্যবস্থা আর কত দিন চলবে? আসলে কি সব চাকরিতে সব ধরনের কোটা রাখার দরকার আছে? সময় এসেছে আমাদের এসব ভেবে দেখার।

বিসিএস ও কিছু চাকরি ছাড়া বাকি চাকরিগুলোয় কোটাপদ্ধতির প্রয়োগ চলছে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, রেলওয়েসহ আরও কিছু চাকরিতে কোটার ব্যবহার বেশি। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা চালু আছে। পোষ্য কোটা, মনে করি একদম একটি অযৌক্তিক কোটা। কারণ মা-বাবার যোগ্যতা কখনো সন্তানের যোগ্যতা হতে পারে না। যিনি চাকরি করেন, তিনি নিজে যেমন স্বাবলম্বী, তেমনই তাঁর পরিবার বা তাঁর ওপর নির্ভরশীলরা তাঁর কারণে উপকারভোগী হন। সুতরাং সেই পরিবারে আরেকজনকে পোষ্য কোটায় চাকরি দেওয়ার মানে হয় না। পক্ষান্তরে যাঁর পরিবারে কেউ চাকরি করেন না, আর্থিক অবস্থাও ভালো না এবং যোগ্যও, তিনিই বরং চাকরি পাওয়ার বেশি দাবি রাখেন। পোষ্য কোটা হচ্ছে ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’, ধনীকে আরও ধনী বানানো, আর গরিবকে আরও গরিব বানানোর মতো। সুতরাং এই বৈষম্যমূলক কোটার অবসান চাই আমরা।

আবার নারী কোটা চালু আছে ৬০ শতাংশ। একসময় নারীরা অনেক পিছিয়ে ছিলেন সবকিছু থেকে, তখন তাঁদের সমাজের মূল ধারায় আনতে কোটার দরকার ছিল। কিন্তু এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে, মেয়েরা অনেক উচ্চশিক্ষিত হচ্ছেন এবং বড় বড় পদে চাকরি করছেন। সুতরাং যদি রাখতেই হয়, তবে তা ২০ শতাংশের বেশি নয়।

মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতীয় বীর। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন এ দেশের মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। সব সরকারই তাঁদের আর্থিক–সামাজিকভাবে আরও সুবিধা দিক এবং তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, চিকিৎসা ও চাকরির ব্যবস্থা করুক, এটিই আমরা চাই। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন। কিন্তু যখন এই সুবিধাগুলো নাতি-নাতনি পর্যায়ে চলে যায়, তখন একটু বেমানান লাগে এবং এতে নানা ধরনের প্রশ্নও তৈরি হয়। কোটার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এমন অসম্মানের অবসান চাই।

বিভিন্ন কোটার কারণে অনেক সময় যোগ্যরা সরকারি চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে পারেন না। কিন্তু কোটাধারীরা কম যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও চাকরি পেয়ে যোগ্যদের উপহাস করেন। আমাদের সংবিধানে সরকারি চাকরি লাভে সবার সমান অধিকার দেওয়া আছে। কিছুটা ব্যতিক্রম রেখেছে সমাজের অনগ্রসর গোষ্ঠী ও অঞ্চলের জন্য। তবে বিভিন্ন কোটাধারীর জন্য নয়।

কোটা নামক বিষফোড়া থেকে বাঁচতে আদালতে রিট হয়েছে। আশা করি, এই বিষফোড়া পদ্ধতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জয় হবে একদিন, ইনশা আল্লাহ।

মো. কাজল হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়