Thank you for trying Sticky AMP!!

চাই শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ

আজকের শিশু আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার। যে শিশু আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে, সেই শিশুটি আজ বঞ্চনার শিকার। কেউবা পারিবারিকভাবে অসচ্ছলতার কারণে, কেউবা সচেতনতার অভাবে। অল্প বয়সেই কঠিন শ্রমের মধ্যে নিমজ্জিত হতে দেখা যায় অনেক শিশুকে। বাসের হেলপার, হোটেলের কঠিন কাজ, ইট ভাঙা, রিকশা কিংবা অটোরিকশা চালাতে প্রতিনিয়তই শিশুদের দেখা যায়। অথচ এসব কাজ শিশুদের নয়।

রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ হলেও সামাজিকভাবে আমরা শিশুশ্রমকে বৈধতা দিচ্ছি। কারণ, আমরাই তো একজন শিশুর রিকশায় উঠে পথ চলছি, হোটেলের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছি, বাসের হেলপার হিসেবে ‘পিচ্চি’ বলে ডাক দিচ্ছি, গৃহস্থালিতে শিশুকে কাজের লোক বানিয়ে রেখেছি। অথচ শিশুরা কখনোই নিজের ইচ্ছায় কাজের মানুষ হতে চায় না। তারা বাধ্য হয়েই কাজে নেমে পড়ে। যে সময় শিশুদের থাকার কথা স্কুলে, সে সময় তাদের দেখা যায় বিভিন্ন কাজ করতে।

মা-বাবার চাপের কারণে ও অভাবের তাড়নায় শিশুশ্রমের সংখ্যা আমাদের দেশে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আবার শিশুরা শ্রম দিতে গিয়েও প্রতিনিয়তই বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে শিশুদের শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। যে নির্যাতনের খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যায়। হোটেলগুলোতেও কর্মরত শিশুদের মারাত্মকভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। শিশুর গায়ে আগুনের সেঁকা, গরম পানি গায়ে ঢেলে দেওয়া, শিশুকে লাঠি দিয়ে পেটানো, মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলা, অন্ধকার রুমে দরজা দিয়ে আটকে রাখা, শীতকালে বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখা, সর্বক্ষণ কাজে লেগে রাখা ইত্যাদির মতো মানবতাহীন কাজ প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছে সমাজের বিত্তবান অনেক নামধারী পশু।

এ ছাড়া কথায় কথায় রাগারাগি, সামান্য ভুলে চড়-থাপ্পড়, খাবারের বেলায় বৈষম্য তো আছেই। দেশের শিশু নির্যাতনের এসব চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে শিশু নির্যাতনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হবে বাংলাদেশ। তবু গৃহস্থালিতে কাজ করে যাচ্ছে দেশের হাজার হাজার অসহায় শিশু। অসহায়ত্ব মেনে নিয়ে শিশুরা সহ্য করে যাচ্ছে হাজারো নির্যাতন। মুখ বুজে সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন অসহায় বাবা-মায়েরা।

চাকরি এখন সোনার হরিণ, তাই লেখাপড়া করে কী হবে? আমরা গরিব, লেখাপড়ার টাকা আমাদের নেই, অর্থহীনদের এমন চিন্তাচেতনাতেও শিশুশ্রম বাড়ছে। এসব অসচেতন ধ্যানধারণা থেকে দেশের মানুষকে বের করতে না পারলে শিশুশ্রম বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একমাত্র সমাজই পারে শিশুশ্রম বন্ধ করতে। শিশুশ্রমের ব্যাপারে সমাজকে সচেতন হতে হবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সামাজিকভাবে শিশুশ্রম বন্ধের প্রয়াস নিলেই শিশুশ্রম বন্ধ হতে বেশি দিন সময় লাগবে না। আইন করে কখনোই শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। কারণ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না বলেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো দিন দিন বেশি ঘটছে। যে দেশে শিশুশ্রম হয়, সে দেশ কীভাবে বিশ্বের রোল মডেল হবে?

শিশুশ্রম একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে দেশের সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ও বিবেকবান প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুশ্রমকে ‘না’ বলতে হবে। আশপাশের সব শিশুকে শ্রমে নয়, লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই আমরা শিশুশ্রমমুক্ত একটি দেশ পাব।

মো. আজিনুর রহমান লিমন

মিয়া পাড়া, চাপানী হাট।