Thank you for trying Sticky AMP!!

ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দুর্বোধ্য কেন হয়?

ডাক্তার বা চিকিৎসক পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিশ্বস্ততা কিংবা নির্ভরতা। ফলে তাঁরা প্রেসক্রিপশন প্যাডে যা লিখে দেন, নির্দ্বিধায় আমরা তা সেবন করি। কিন্তু অনেক সময় সেই প্রেসক্রিপশন প্যাডের লেখাই যদি আমাদের বোধগম্য না হয় এবং ভুল ওষুধ সেবন করে স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে এর থেকে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে। বেশির ভাগ চিকিৎসকের লেখা এতই দুর্বোধ্য যে ফার্মেসির কর্মীদেরও বুঝতে হিমশিম খেতে হয়। এমনও অভিযোগ আছে, ডাক্তাররা ওষুধের সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে প্রেসক্রিপশন লেখেন, যাতে নির্দিষ্ট ফার্মেসি ছাড়া আর কোথাও সেটা বুঝতে না পারে। এটা নাকি তাঁদের মধ্যে গোপন আন্ডারস্ট্যান্ডিং!

চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে প্রচলিত কৌতুকের যেন শেষ নেই। যেমন একবার ডাক্তারের উদ্দেশে রোগীর চিরকুট, ‘ডাক্তার সাহেব, চলে গেলাম। চলে গেলাম বলতে, আমাকে চলে যেতে হলো। আর চলে যাওয়ার জন্য রয়েছে একটি কারণ। আমার বউ বিশ্বাস করে, যত বড় ডাক্তার, তত অসুন্দর তার হাতের লেখা। কিন্তু আমি আপনাকে অন্য আরেকজন রোগীর প্রেসক্রিপশন লেখার সময় লক্ষ করলাম, আপনার হাতের লেখা বেশ ভালো। সুতরাং, আপনি যদি আমার চিকিৎসা করেন এবং প্রেসক্রিপশন দেন, তাহলে আমার বউকে কোনোভাবেই আমি বিশ্বাস করাতে পারব না যে আমি ভালো কোনো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।’

এমন কৌতুকও প্রচলিত, ‘তেলাপোকার পায়ে কালি লাগিয়ে একটি প্রেসক্রিপশন প্যাডের ওপর ছেড়ে দিলে যে আঁকিবুঁকি হয়, সেটাই নাকি ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন।’ ব্যাপারগুলো হাস্যকর হলেও অনেক দুঃখজনক এবং লজ্জার বটে। কারণ, যেখানে একটি প্রেসক্রিপশনের ওপর রোগীর সুস্থ হওয়া, এমনকি বেঁচে থাকাও নির্ভর করে, সেখানে দুর্বোধ্য হাতের লেখা পড়তে যদি তাঁদের অসুবিধাই হয়, তাহলে সেই প্রেসক্রিপশনের কোনো যথার্থতাই থাকে না।

ডাক্তারদের এই দুর্বোধ্য হাতের লেখার অভিযোগ কেবল বাংলাদেশেই না, বরং বিশ্বের অনেক দেশেই কমবেশি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের (আইওএম) এক গবেষণার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর ৭ হাজার রোগী মারা যান কেবল প্রেসক্রিপশনে ডাক্তারদের হাতের লেখা না বুঝতে পারায় এবং ভুল ওষুধ সেবন করায়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিবছর ১৫ লাখ রোগী অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভুল ওষুধ সেবন করায়।

আইওএমের বক্তব্য অনুসারে, ওষুধের দোকানের কর্মীরাও অনেক সময় প্রেসক্রিপশনের লেখা বুঝতে ভুল করে থাকেন। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছেন সেলেক্স। অন্যদিকে ওষুধের দোকানদার তাঁকে দিয়ে দিলেন সেলেব্রেক্স (আর্থ্রাইটিসের ওষুধ)। ফলে সুস্থ হওয়ার বদলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রে ‘নেপসি’ নামের একটি প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। জানা যায়, এই প্রোগ্রামের সাহায্যে চিকিৎসকেরা হাতে লেখার পরিবর্তে ইলেকট্রনিক প্রেসক্রিপশন লেখার সুবিধা পাবেন। ফলে হাতের লেখার সমস্যা আর থাকছে না।

এ ব্যাপারে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললে শোনা যায়, যাঁরা জনপ্রিয় চিকিৎসক, দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ রোগী তাঁদের কাছেই ভিড় জমান। ফলে সিনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে তাঁদের অতিরিক্ত সংখ্যক রোগী দেখতে হচ্ছে ও ব্যবস্থাপত্র লিখতে হচ্ছে, ফলে দ্রুত লিখতে গিয়ে হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে।

আবার এ–ও জানা যায়, সার্জনদের হাতের লেখা খারাপ হয়। কারণ, তাঁরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের কাঁটাছেঁড়ার মধ্যে থাকেন এবং জটিল সব অস্ত্রোপচার করেন। সে রকম কয়েকটি অস্ত্রোপচার করার পরপর যখন চেম্বারে ফিরে ব্যবস্থাপত্র লিখতে বসেন, তখন ভালো হাতের লেখার জন্য তাঁদের পেশিতে যে ফাইন টিউন থাকা দরকার, তা আর থাকে না।

কিন্তু যে কারণেই হোক, বেশির ভাগ চিকিৎসকই দুর্বোধ্য অক্ষরে লিখতে লিখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় রোগীদের। সুতরাং, কারণ যা–ই হোক, সেটার জন্য অতি দুর্বোধ্য অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লেখা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। স্পষ্টাক্ষরে পাঠোপযোগী প্রেসক্রিপশন লেখার প্রতি তাদের সচেতন হতে হবে।

ফারজানা আক্তার ঝিমি
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।