Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও স্বাধীনতা পুরস্কার

বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে আর কয়েক দিন পর। এ স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলায়। সেদিনের সেই ক্ষুব্ধ তারুণ্য জন্ম দেয় এক নতুন জাতীয়তাবাদী চেতনার। যার পথ ধরে চূড়ান্ত বিজয় আসে ১৯৭১-এ।

শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এমন একটি প্রতিষ্ঠান, বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি পদক্ষেপে অনন্য ভূমিকা রেখে গেছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও রয়েছে এর উজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, প্রতিষ্ঠানটি আজ পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রীয় পদক বা পুরস্কার পায়নি।

১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই ১০১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন এ চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এর কিছুদিন পর ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকেই ভাষাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রটির পূর্বাংশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ জন্ম নেয়। এই অসন্তোষের সূচনালগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৫২ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় ঘোষণা দেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এ সময় বঙ্গবন্ধু কারাবন্দী ছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কেবিনে বসেই তিনি ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নঈমুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এ তথ্য তুলে ধরেন।

মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা চিকিৎসক, তৎকালীন ছাত্র, কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তাঁদের অনেকেই অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিম আহমেদ, আলী হাফিজ সেলিম, আবু ইউসুফ মিয়া, ইকবাল আহমেদ ফারুক, মুজিবুল হক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোজাফফর, আমজাদ হোসেন, ওসমান, গোলাম কবীর, নুরুজ্জামান, শাহাদত প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়।

যুদ্ধ চলাকালে হাসপাতালে কর্মরত প্রায় সব চিকিৎসকই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। মুক্তিযোদ্ধারা আসল নাম গোপন রেখে হাসপাতালে ভর্তি হতেন। হাসপাতালে এসব কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতেন অধ্যাপক ফজলে রাব্বী। তিনি তাঁর আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন। ১৫ ডিসেম্বর তিনি ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন।

ছাত্রাবাসের ১০৭ নম্বর কক্ষে রাজাকারদের ওপর আক্রমণ ছিল এক গৌরবময় ঘটনা। এতে তিনজন রাজাকার নিহত হয়। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নিপা লাহিড়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে যাওয়ার পথে ফতুল্লায় নিহত হন। আরেক ছাত্র সিরাজুল ইসলাম হাসপাতালে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। তিনি রাতে হোস্টেলে না গিয়ে হাসপাতালের ক্যানসার ওয়ার্ডে ঘুমাতেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কিছু স্বাধীনতাবিরোধী ছাত্রের সহায়তায় তাঁকে ১১ ডিসেম্বর রাতে ক্যানসার ওয়ার্ড থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং অ্যালামনিবৃন্দের অবদান অপরিসীম। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, দেশের চিকিৎসা পেশার মানোন্নয়ন এবং দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় এ কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণ–আন্দোলনও এই মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও রাজপথের সহযোদ্ধা ডা. শামসুল আলম খান মিলনের রক্তে পেয়েছিল নতুন মাত্রা। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কেবল দেশের ভেতরেই নন, ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। সবখানেই পেশাগত প্রতিভায় তাঁরা দেদীপ্যমান।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এখনো পর্যন্ত কোনো জাতীয় স্বীকৃতি পায়নি। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে ঢাকা মেডিকেল কলেজকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান সেক্রেটারি জেনারেল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যালামনাই ট্রাস্ট।