Thank you for trying Sticky AMP!!

আমি না বললেও, মাদক আমাকে ছাড়ছে না...

আমি না বললেও, মাদক আমাকে ছাড়ছে না—এমন কথা শোনা গেছে অনেক মাদকাসক্ত ব্যক্তির মুখ থেকে। এটা খুবই ভাবনার বিষয়। কেননা মাদকাসক্তি, যাকে বলা হয় সব ধরনের অপরাধের মূল। নেশায় জড়িয়ে পড়া বা মাদকাসক্তি আসলে একটি ব্যাধি। সাধারণত চিকিৎসাবিদ্যায় মাদকাসক্তিকে বলা হয় ক্রনিক রিলাক্সিং ব্রেইন ডিজিজ। একজন মানুষ প্রথমেই কিন্তু মাদক সেবন করে না। প্রাথমিক মুহূর্তে সে অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ডেকে আনে সিগারেটের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রথমে যেটি করে তা হলো সিগারেটের নেশা।

ব্যক্তি একপর্যায়ে ধূমপানে এক ধরনের ভালো লাগার অনুভূতি পেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে ধাপে ধাপে শুরু হয় নেশার গেম খেলা এবং লেবেল পরিবর্তনে তৎপরতা বৃদ্ধি। পরে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সার্কিটটি মাদকে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার সহনশীলতা বেড়ে যায়। তখন মাদক না নিলে বা কম নিলে ‘উইথড্রয়াল সিনড্রোম’ শুরু হয়।

অবাক করার বিষয় হচ্ছে একবার কেউ মাদকে আসক্ত হয়ে গেলে, তাঁর মস্তিষ্ক মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অর্থাৎ মাদক হয়ে যায় মস্তিষ্কের কন্ট্রোলার বা নিয়ন্ত্রক।

এই বিষয় নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল পরিষ্কার ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মাদক নিতে নিতে মস্তিষ্কে একটি শর্তাধীন অবস্থা (কন্ডিশনিং) তৈরি হয়। তখন মাদকবিষয়ক কোনো সূত্র পেলেই মাদক গ্রহণ করার জন্য তাড়না জন্ম নেয় যেটা মস্তিষ্ক হ্যাংয়ের মতো কাজ করে। যেমন: মাদক গ্রহণ করার স্থান, সময় বা সঙ্গীদের দেখলেই মস্তিষ্ক আবার মাদক গ্রহণ করার জন্য সংকেত দিতে থাকে। মস্তিষ্কের পরিবর্তন, রিওয়ার্ড সেন্টারের উদ্দীপনা, নিউরোট্রান্সমিটারের (ডোপামিন ইত্যাদি) নিঃসরণ, শর্তাধীন অবস্থা এবং উইথড্রয়াল সিনড্রোম সবকিছুই কিন্তু মাদক-নির্ভরতার জন্য দায়ী।’

যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান অ্যাডিকশন সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসার পর ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এক বছরের মধ্যে আবারও মাদকদ্রব্য ব্যবহার শুরু করে।

মাদকদ্রব্য সেবনে একজন ব্যক্তি নিজে যেমন তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছেন, একই সঙ্গে তাঁরা অসহায় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জীবন।

মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছরের বয়সের মানুষ যার হার ৭০ ভাগ। এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা সিংহভাগ।

বিভিন্ন কারণে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। যেমন, বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতা, নৈতিক অবক্ষয়, মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, পরিবেশগত সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি। মাদকাসক্তিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক রোগের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ মাদক সেবনে মানসিক চাপ কমার বিপরীতে বেড়ে যাবে। মাদক কোনো সুফল বয়ে আনবে না, বরং জীবনকে চিরতরে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা, সরকার এবং সম্প্রদায়গুলো মাদকের অপব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব এবং প্রতিরোধ ও চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ইভেন্ট, প্রচারাভিযান এবং কার্যকলাপের আয়োজন করেই যাচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারকেও আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে। কেননা মাদক নিরাময় খুবই কঠিন।

মাদকদ্রব্য সেবনে একজন ব্যক্তি নিজে যেমন তিলে তিলে ধ্বংস হচ্ছেন, একই সঙ্গে তাঁরা অসহায় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জীবন।

আত্মঘাতীমূলক এই সেবন পরিহার করে জীবনকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। তাই সবাইকে মাদককে না বলার শিক্ষা অর্জন করতে হবে। সুস্থতার বাণী নিয়ে দাঁড়াই মাদকাসক্তদের পাশে, বোঝাই মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব। তাহলেই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতায় রক্ষা পেতে পারে একটি অনাগত বা আগত শিশুর ভবিষ্যৎ। সেই সঙ্গে ফিরে পেতে পারে পারিবারিক প্রশান্তি।

এস এম জসিম
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ।