Thank you for trying Sticky AMP!!

নেপাল থেকে ফেরার পর ছাদখোলা বাসে সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

আনন্দে ভাসানো বছর দেখাচ্ছে আশা

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়ে নিউজিল্যান্ডকে ওদেরই মাটিতে প্রথমবার টেস্টে হারিয়ে যে বছর শুরু হয়েছিল, পরের ১২ মাসে সেটা একের পর এক আরও কত যে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে!

দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজ জয়, দেশের মাটিতেও আফগানিস্তান ও ভারতকে হারানো, নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়, নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় মূল আসরে জায়গা করে নেওয়া, এশিয়া কাপ ওয়ার্ল্ড র​্যাঙ্কিং আর্চারিতে রোমান সানা-দিয়া সিদ্দিকী-নাসরিন আকতারদের সোনাজয়ী হাসি—খেলাপ্রেমী বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিটি অর্জনই আনন্দে ভাসিয়েছে।

তবে আনন্দের জোয়ার যেটাকে বলে, সেটা এনে দিয়েছে আসলে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল, গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে প্রথমবারের মতো সেরা হয়ে ফেরা সাবিনা খাতুন-সানজিদা আকতাররা একেবারে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দেশের প্রতিটি ফুটবলপ্রেমী মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছেন, আবেগে ভাসিয়েছেন, আনন্দে কাঁদিয়েছেন। কাঠমান্ডু জয় করে ঢাকায় ফেরার পর মেয়েদের বরণ করতে ঢাকার রাস্তা যে জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল, এ দেশের খেলাধুলার ইতিহাসেই তেমন উদ্​যাপন বিরল। এমনকি কোনো টুর্নামেন্ট জিতে আমাদের কোনো দলের দেশে ফেরার পর ছাদখোলা বাসে শহর ভ্রমণ, এ–ও তো এক অসাধারণ ঘটনা।

সাবিনা-সানজিদাদের মতো চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও ভবিষ্যতে বড় কিছু করার আশা জাগিয়েছে বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দলগুলো। ভারতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ ও ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফজয়ী বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্যের পেছনের গল্প নিয়ে প্রথম আলো নির্মাণ করেছে প্রামাণ্যচিত্র, সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে। এই মেয়েদের পথচলায়, এগিয়ে যাওয়ায় সব সময়ই পাশে থেকেছে প্রথম আলো। চ্যাম্পিয়ন নারী দলে খেলা ৮ জনসহ ২৫ জনকে বৃত্তি দেওয়া হতো প্রথম আলোর পক্ষ থেকে।

মেয়েদের এই সাফল্য যাতে এখানেই থেমে না থাকে, সে জন্য নারী ফুটবলারদের উন্নয়নে প্রথম আলোর উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয় দেড় কোটি টাকা, যেখান থেকে গত ১২ নভেম্বর চ্যাম্পিয়ন দলের ২৩ খেলোয়াড় এবং কোচ, সহকারীসহ ৩০ জনের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় ১ লাখ করে টাকা। বাকি ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের হাতে।

মেয়েদের মতো ছেলেরাও এমন আনন্দের উপলক্ষ এনে দেবেন, নতুন বছরে সেটাই প্রত্যাশা। সাবিনারা যে ট্রফি গত বছর এনে দিয়েছেন দেশকে, নতুন বছরে জামাল ভূঁইয়ারাও লড়বেন সেই ট্রফির জন্য। এখনো ভেন্যু ঠিক হয়নি, তবে পুরুষদের সাফ ফুটবল ২০২৩ সালেই হবে—এটা প্রায় নিশ্চিত, যে সাফের শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশ একবারই পেয়েছিল, সেই ২০০৩ সালে। ২০ বছর ধরে অধরা সেই ট্রফি পেলে হয়তো জামালদের বরণ করতে আরও একবার ছাদখোলা বাস নিয়েই অপেক্ষা করবেন এ দেশের মানুষ।

উৎসবের উপলক্ষ নতুন বছরে শুধু জামালরা নন, এনে দিতে পারেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরাও, এনে দিতে পারেন জাহানারা-রোমানা-সালমারাও। নারী ও পুরুষ দলের ক্রিকেটাররা অবশ্য গত বছরও অনেক উদ্​যাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন। যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশেই আগে কখনো টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ, যাদের মাটিতে নিদেনপক্ষে কখনো ড্র–ও করতে পারেননি সাকিব-তামিমরা, হেরেছিলেন সব সংস্করণ মিলিয়ে ৩২টি ম্যাচ, সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে প্রায় পূর্ণ শক্তির দলের বিপক্ষে টেস্ট জিতে ২০২২ সালটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপর সাকিব-তামিমরা প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়ও। পাশাপাশি আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, এ সংস্করণে তারা সত্যিই ধারাবাহিক, সত্যিই সেরা দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো।

আর এ কারণেই ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে বড় আশা। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওই বিশ্বকাপই হয়তো হতে যাচ্ছে এ সংস্করণে সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর শেষ বিশ্বকাপ। শেষটার একটা ছাপ তো তাঁরা রেখে যেতে চাইবেনই। সঙ্গে পাচ্ছেন পরের প্রজন্মের আস্থাভাজন সতীর্থদের। দীর্ঘদিন ধরে সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যানের তকমা বয়ে বেড়ানো লিটন দাস অবশেষে গত বছরজুড়ে দারুণ পারফর্ম করে নিজেকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। গত বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে যিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ১ হাজার ৯২১ রান নিয়ে আছেন বাবর আজমের পরেই। লিটনের মতো নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। বোলার পরিচয়ের আড়ালে নিজের ব্যাটসম্যান সত্তাকে হারিয়ে ফেলা মিরাজ অবশেষে নিজেকে মেলে ধরেছেন অলরাউন্ডার হিসেবে, পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটাও; আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে করেছেন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে মিরাজ যেন এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সেরা সময়ই পার করছেন। এমন একটা দল নিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করার আশা তো করাই যায়।

বিশ্বকাপ ছাড়াও নতুন বছরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এবং ওদের মাঠে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ, অতিথি হয়ে আসবে ইংল্যান্ডও। এশিয়া কাপ হওয়ার কথা আছে পাকিস্তানে। আনন্দের উপলক্ষ হতে পারে সব কটি সিরিজই।

নতুন বছরে বিশ্বকাপ খেলবেন বাংলাদেশের মেয়েরাও, তবে সেটা টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। সেখানে প্রত্যাশা খুব বড় নয়, তবে রোমানা-জাহানারারা আগেও প্রত্যাশা ছাপিয়ে চমকে দিয়েছেন, দিতে পারেন আবারও।

যেমন দিতে পারেন আর্চারিতে নতুন কেউ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের আর্চারির পোস্টার বয় হয়ে থাকা রোমান সানা গত নভেম্বরে শৃঙ্খলার কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন দুই বছরের জন্য। আগস্টে প্যারিসে আর্চারি বিশ্বকাপ, জুলাইয়ে বার্লিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। নভেম্বরে ব্যাংককের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তাই রোমানকে পাবে না বাংলাদেশ। রোমানকে ছাড়া আর্চারির সাম্প্রতিক সাফল্যে হয়তো কিছুটা ভাটা পড়বে নতুন বছরে। আবার অন্যভাবে দেখলে, এটাও একরকম সুযোগ রাকিব মিয়া, রামকৃষ্ণ সাহা, জুয়েল খান, হাকিম আহমেদদের মধ্যে কারও নতুন ‘রোমান’ হয়ে ওঠার।

লেখক: সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক