Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যাংক খাত ধ্বংস, শেয়ারবাজার ধস ও টাকা পাচারে একই গোষ্ঠী

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কামাল মুজেরীর এক অসামান্য সাক্ষাৎকার বেরিয়েছে প্রথম আলোয়। সম্পূর্ণ আলোচনা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও হৃদয়গ্রাহী। তবে আমি তাঁর ‘সুশাসন’ কথাটার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কিছু লেখার সাহস করেছি।

সুশাসনের অভাব শুধু ব্যাংক বা শেয়ারবাজারে নয়, এ সংকট প্রশাসনের সর্বত্র। রেলওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। রেলওয়ে বিভাগ জনবহুল। বহু পুরোনো বিভাগ। অথচ রেলগেট পরিচালনার, অর্থাৎ সময়মতো খোলা ও বন্ধ করার কাজটি নিশ্চিত করতে পারল না। প্রায়ই করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

দুর্ঘটনার পর একটি নির্বাহী তদন্ত কমিটি হয় এবং গেটকিপার সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন। তারপর সবকিছু অতল হিমাগারে। কর্তৃপক্ষ অনড়–অবিচল। সুশাসনের চরম সংকটের এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত আর বোধ হয় পাওয়া যাবে না।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বহুবার বলতে শুনেছি, দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু অন্য পরিস্থিতিতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে ব্যাংক একীভূতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। সবলের সঙ্গে একীভূত করা হবে দুর্বল ব্যাংকের। ব্যাংকের একীভূতকরণ বা অধিকরণের বিষয়টি নতুন নয়। কিন্তু এটি কারও নির্দেশে হতে পারে না, অন্তত অর্থনীতির বিজ্ঞানে। পরস্পরের প্রয়োজনে আর্থিক দিক পরিপূর্ণভাবে আলোচনার পর এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।

Also Read: একই গোষ্ঠী ব্যাংক খাত ধ্বংস করেছে, শেয়ারবাজারে ধস নামাচ্ছে

আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটা বড় গুণ ছিল যে তিনি সত্যি কথাটা বলতে দ্বিধা করতেন না। এর ফলে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যাহোক, তাঁর কথায় এটা পরিষ্কার যে এসব নতুন ব্যাংক জন্ডিস রোগী। এদের সঙ্গে অপরের একীভূতকরণের ফল কী হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব একীভূতকরণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা আর রিকুইজেসন আইনের প্রয়োগ সহজ করা। তাহলে ব্যাংক খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

স্টক এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল যে এটি সদস্যদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। যত দোষ নন্দ ঘোষের, অর্থাৎ স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের। আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশে প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন করা হলো। প্রশাসনকে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কাঠামো অনুসারে সম্পূর্ণ পৃথক করা হলো। পরিচালনা পর্ষদে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা সংখ্যালঘিষ্ঠ।

এখন অবস্থাটা হয়েছে জ্বলন্ত চুলা থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ের মতো। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এখন রেহাই পাচ্ছেন না। প্রাইমারি মার্কেটে আবেদন করতে হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট সিকিউরিটি মানি থাকতে হবে। আবেদনের অর্থ ছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতির আদর্শ অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের এক্সচেঞ্জকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ভূমিকা হবে আম্পায়ারের।

আইন ভঙ্গ করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্লোর প্রাইজ কত দিন কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে, এ দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জের। তবেই স্টক এক্সচেঞ্জ জাতীয় অর্থনীতিতে তার ভূমিকা পালন করতে পারবে। আলোচ্য সাক্ষাৎকারে অনেক বিষয় আলোচিত হয়েছে। তবে দেশ থেকে ভয়াবহ আকারে অর্থ পাচারের কথাটি আসেনি।

তবে বিষয়টি সংযুক্ত করা যেতে পারে আলোচনার শিরোনামের সঙ্গে। শিরোনামে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাত ধ্বংস ও শেয়ারবাজার ধসে একই গোষ্ঠী। এর সঙ্গে যোগ দিয়ে যদি বলা যায়, ব্যাংক খাত ধ্বংস, শেয়ারবাজার ধস এবং অর্থ পাচারে একই গোষ্ঠী, তাহলে বোধ হয় ভুল হবে না।

দ্বিরুক্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েই বলতে হয়, সুশাসন হলো সর্বরোগের ওষুধ। আর এই সুশাসন বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। মুস্তফা কামাল মুজেরী অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলেছেন, অসুস্থ রাজনীতি অর্থনীতি অসুস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ।

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা