Thank you for trying Sticky AMP!!

আ. লীগে বিরোধ জিইয়েই থাকছে

২২ বছর ধরে সম্মেলন হচ্ছে না বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের। অভ্যন্তরীণ বিরোধও রয়েছে। এরই মধ্যে আগামী নভেম্বরে সম্মেলনের কথা চলছে। সম্মেলনকে নিয়ে নেতা–কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা। তবে এই সম্মেলনে কমিটি গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে কি না, সেদিকে নজর রাখছেন অনেকে।  

বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি ছিল। একটির নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল আমিন ও আবুল মোকাররম। এই কমিটি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদের অনুগত এবং মূল স্রোতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আরেকটির নেতৃত্বে ছিলেন আহমেদ হোসেন ও মোহাম্মদ ঈছা। আহমেদ–ঈছার পাল্টা কমিটির মুরুব্বি হলেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম।

দলীয় সূত্র জানায়, যুগ যুগ ধরে বোয়ালখালী আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে। এ কারণে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোনো জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা বন্দরে ভিড়তে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের কোন্দল কাজে লাগিয়ে জয় তুলে নেয় বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক। তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত মহাজোটের প্রার্থী মইন উদ্দীন খান বাদল নৌকা প্রতীক নিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হন। 

দলীয় সূত্র জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের তিন জেলার সভাপতি ও সম্পাদকেরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বোয়ালখালী ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এতে উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, মাহবুব-উল হানিফসহ চট্টগ্রামের নেতারা। দুটি উপজেলায় কমিটি ভেঙে দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশের বাইরে থাকায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন হয়নি।  

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদ দেশের বাইরে। তিনি ফিরলেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হবে। নভেম্বরের মধ্যেই আমরা সম্মেলন শেষ করে নতুন কমিটি উপহার দিতে পারব।’

বিরোধ এখনো চাঙা 

সম্মেলন ঘিরে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্ত কমিটি একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদ ও কুয়েতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামের মর্জির ওপর। তাঁরা দুজন চাইলে বিরোধ মুহূর্তের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্ভব বলে দলীয় নেতারা মনে করেন। 

মূল ধারার উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল মোকাররম বিরোধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কয়েকজন নেতা পাল্টা কমিটি গঠন করেছেন। কেন পাল্টা কমিটি হয়েছে তা তাঁরা ভালো বলতে পারবেন। 

বোয়ালখালী আ.লীগ
যুগ যুগ ধরে বোয়ালখালী আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে
তিন বছর ধরে দুটি কমিটি

এক প্রশ্নের জবাবে মোকাররম বলেন, ‘অক্টোবরের শেষের দিকে কিংবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমাদের সম্মেলন হবে। আমাদের নেতা মোছলেম উদ্দীন আহমেদ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরলে দিনক্ষণ ঠিক হবে।’

বোয়ালখালী উপজেলার পাল্টা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ঈছা সংগঠনে বিরোধ জিইয়ে রাখার জন্য জেলার একজন শীর্ষ নেতাকে দুষলেন। ওই নেতার নাম উল্লেখ না করে ঈছা বলেন, ‘আমাদের জেলার এক নেতা একতরফা সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পা যাঁরা চাটতে পারেন তাঁরাই দলের কমিটিতে জায়গা পান। ওই নেতার একতরফা কমিটিতে আটজন খুনের মামলার আসামি জায়গা পান। আরও অনেক চাঁদাবাজ কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। খুনের আসামি ও চাঁদাবাজদের দিয়ে সংগঠন চলতে পারে না। এর সুফল নিচ্ছে বিএনপি–জামায়াত। এতে দলের অর্জন তুলে ধরা যাচ্ছে না।’ 

ঈছা কার্যত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘খুনি ও চাঁদাবাজদের বাইরে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে আমরা আরেকটা কমিটি গঠন করেছি, যাতে মাঠের নেতারা হারিয়ে না যান।’ 

আওয়ামী লীগ নেতারা বিরোধ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন। আগামী সম্মেলনের পর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা চেয়েছেন তাঁরা। যুগ যুগ ধরে বিরোধের কারণে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না বলে তাঁদের অভিমত। 

বোয়ালখালী উপজেলা বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মো. মহসীন উদ্দীন ত্যাগী এবং সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক অর্জন আছে। নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকলে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’