Thank you for trying Sticky AMP!!

উপজেলায় বিদ্রোহীদের কাছে ধরাশায়ী আ.লীগের প্রার্থীরা

পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ৪৭৩টি উপজেলার নির্বাচনে ১৪৯টিতে চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১৪০ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এসব উপজেলায় দলীয় বিদ্রোহীদের কাছে হেরে যান সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীরা। বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠেও নেমেছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-সাংসদ।

নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বশেষ ১৮ জুন অনুষ্ঠিত ১৮টি উপজেলার নির্বাচনে ৯টিতে চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ৪৭৩টি উপজেলার মধ্যে ১০৯টিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। সব মিলিয়ে ৫ ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে ৩২০ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন ১৪৯ উপজেলায়। জাতীয় পার্টির তিন এবং জেপির এক প্রার্থী জিতেছেন। পার্বত্য তিন জেলার কয়েকটি উপজেলায় আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র পদে জয়ী হয়েছেন। গোপালগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। সেখানে সবাই ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে না পারা এবং দলীয় কোন্দলের কারণে মূলত বিদ্রোহী প্রার্থীরা বেশি সংখ্যায় জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সাংসদদের অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ নেন। তা ছাড়া এবারের উপজেলা নির্বাচন তুলনামূলক সুষ্ঠু হওয়ায় অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ ওঠে ৫৫ জন দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পঞ্চম ধাপেও একাধিক সাংসদ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অসারতা প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বলা হয়েছিল, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হলে দলে শৃঙ্খলা আসবে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে এর বিপরীত চিত্রই দেখা গেছে। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে মানের অবনতি হওয়াই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজয়ের বড় কারণ।

পাঁচ ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ কেউ স্থানীয় সাংসদের আত্মীয়। আবার কেউ কেউ একান্ত অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাংসদেরা সরাসরি ঘোষণা না দিলেও তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সাংসদদের অনুসারীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারে অংশ নেন। আবার কোনো কোনো সাংসদ আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠেও নেমেছেন। নির্বাচন চলাকালীন ১৪ জন সাংসদকে এলাকা ছাড়তে বলে নির্বাচন কমিশন।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ওবায়দুর রহমান খান। তিনি সাবেক নৌমন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ শাজাহান খানের ছোট ভাই এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। এই পদে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। তিনি মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, শাজাহান খান বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগসূত্র রেখে তাঁর ভাইয়ের পক্ষে ভোট সংগ্রহ করেছেন।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী এজাজ আহমেদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ার হেরেছেন প্রায় দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিরোধিতাই পরাজয়ের মূল কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় জনগণ ও রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আভাস দিয়েছেন তিনি।