Thank you for trying Sticky AMP!!

ঐক্যের সাংগঠনিক কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি

রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে শনিবার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত সমাবেশ হয়। ছবি: প্রথম আলো
>

• গত শনিবারের সমাবেশ বড় ঐক্যের বার্তা
• ঐক্যকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়াটাই এখন চ্যালেঞ্জ
• বিএনপির সঙ্গে কিছু বিষয়ে বোঝাপড়া বাকি আছে
• বিএনপিকে কীভাবে যুক্ত করা হবে, সে সিদ্ধান্ত হয়নি
• ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়
• ঢাকার বাইরে কোথায়, কখন সমাবেশ চূড়ান্ত হয়নি

নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও এর কোনো সাংগঠনিক কাঠামো এখনো দাঁড় হয়নি।

ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বলছেন, শনিবার নাট্যমঞ্চের নাগরিক সমাবেশ একটি বড় ঐক্যের বার্তা দিয়েছে। এখন এই ঐক্যকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐক্যের উদ্যোক্তাদের এখনো বোঝাপড়া হয়নি। তাই সামনের কর্মসূচিতে বিএনপিকে কীভাবে যুক্ত করা হবে, তা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পরবর্তী কর্মসূচি হচ্ছে পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়। ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ মতবিনিময় সভা হবে। এতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ঢাকার বাইরে সমাবেশের কর্মসূচি এখন ঠিক হয়নি।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নেতা সুব্রত চৌধুরী গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঐক্য প্রক্রিয়ার পরবর্তী কর্মসূচি এবং এর সাংগঠনিক কমিটি গঠনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা আজ সোমবার বৈঠকে বসবেন। গত শনিবার নাগরিক সমাবেশের পর কামাল হোসেনের বাসায় নেতারা এক দফা বসেছিলেন। বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি ও কমিটি গঠন ছাড়াও বৃহত্তর ঐক্যে বিএনপিকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে বিএনপির অংশগ্রহণ দেশবাসীর কাছে একটি বৃহত্তর ঐক্যের বার্তা গেছে। যদিও কিসের ভিত্তিতে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের এই ঐক্য, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। তাই এখন যদি বিএনপিকে সঙ্গে না রেখে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়, তাহলে ঐক্য নিয়ে মাঠে ভুল বার্তা যাবে। এ অবস্থায় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতারা ক্ষমতার ভারসাম্য আনাসহ কিছু বিষয়ে বিএনপির কাছে নিশ্চয়তা চাইতে পারেন।

যুক্তফ্রন্টের একজন নেতা বলেন, ৫ দফা দাবি এবং ৯ দফা লক্ষ্য সামনে রেখে আন্দোলন গড়তে ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের মধ্যে সমঝোতা হয়। ৫ দফা হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য। আর ৯ দফা হচ্ছে নির্বাচনের পর সবার নিরাপত্তা ও সুশাসনের লক্ষ্যে। এসব দাবি বিএনপিরও। কিন্তু ক্ষমতাপ্রত্যাশী বড় দল হিসেবে বিএনপির কাছে তাদের চাওয়া হচ্ছে সব নাগরিকের নিরাপত্তা এবং আক্ষরিক অর্থে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার। এর জন্য প্রয়োজন ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, যোগ্য নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা। এসব বিষয়ে দ্রুত বিএনপির সঙ্গে বসবেন ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের নেতারা।

এদিকে বিএনপি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের সূচনা হলেও এর নেতৃত্ব কে দেবেন, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। এ নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের মধ্যে স্নায়ু লড়াই আছে। আবার বিএনপির দিক থেকেও বৃহত্তর ঐক্যে প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে একধরনের তৎপরতা আছে।

বিএনপিসহ কিছু দল ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হলেও সিপিবি, বাসদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোট এখনো এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়নি। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা আশা করছেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামে মাঠের কর্মসূচিতে বাম জোটকে পাশে পাওয়া যাবে।

ড. কামাল হোসেনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শনিবার নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন বা কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বাম জোট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচন সামনে রেখে সৃষ্ট সংকট-সংঘাত থেকে উত্তরণে বাম জোট সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। মাঠের লড়াইয়ে যারা থাকবে, তাদের সঙ্গে মাঠে দেখা হবে।

ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশ্নে সরকারের বাইরে থাকা সব দলের দাবি অভিন্ন। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো দল ও নেতার সঙ্গে মতাদর্শ বা চিন্তার মিল না থাকলেও কার্যকর গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন ড. কামাল হোসেন।

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও যুক্তফ্রন্টের সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাগরিক সমাবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যের সুন্দর সূচনা হয়েছে। এটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের এই ঐক্যে আমরা সফল হব।’