Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্ষমতার অংশীদার হতে নতুন নতুন ইসলামি জোট

>
  • পরিচিত ইসলামি দলগুলো নানা শিবিরে অবস্থান নিতে শুরু করেছে
  • অজানা-অচেনা নামসর্বস্ব দল নিয়েও গঠিত হচ্ছে নতুন নতুন জোট
  • সর্বশেষ শনিবার আইডিএ নামে নতুন ধর্মভিত্তিক জোটের আত্মপ্রকাশ
  • পরিচিত ইসলামি দলগুলো আ. লীগ ও বিএনপি শিবিরে বিভক্ত

ক্ষমতার অংশীদার হতে নির্বাচনের প্রাক্কালে ইসলাম ধর্মভিত্তিক দলগুলো একের পর এক জোট গঠন করছে। তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, তাদের মিত্র ও বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির সঙ্গে নানা জোট ও মিত্রতা গড়ে তুলতে তৎপর রয়েছে। কেউ কেউ আবার আলাদা জোট গঠন করছে সরকারি দলের মিত্র হওয়ার আশায়। এর মধ্যে সরকারের সমর্থক জোটের সংখ্যা বেশি।

সর্বশেষ গতকাল শনিবার ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (আইডিএ) নামে একটি নতুন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আইডিএ গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো: সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মহাজোটের ভেতরে বা বাইরে থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে আরও শক্তিশালী করা এবং আগামী নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ব্যাপক গণসমর্থন সৃষ্টি করা।’

শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ও জমিয়তুল উলামার সভাপতি ফরিদ উদ্দিন মাসউদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক জোট হওয়া রাজনীতির প্রতি একটা ইতিবাচক দিক। এতে নির্বাচনটা স্বচ্ছ হতে সহায়ক হবে। তাতে বড় দলগুলো চাপ অনুভব করবে। তিনি বলেন, ‘তবে যেসব দল জোট করছে তৃণমূলে তাদের অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়, তারা অন্যের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে কিছু করার চেষ্টা করছে।’

নির্বাচন সামনে রেখে পরিচিত ইসলামি দলগুলো এরই মধ্যে নানা শিবিরে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। আবার, অনেক অজানা-অচেনা নামসর্বস্ব দল নিয়েও গঠিত হচ্ছে নতুন নতুন জোট। গতকাল ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নামে যে জোটের আত্মপ্রকাশ হয়, তার শরিক দলের সংখ্যা ১৫। উল্লেখযোগ্য দলগুলো হলো বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী গ্রুপ, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জনসেবা আন্দোলন, ন্যাশনাল লেবার পার্টি। দলগুলোর কোনোটিরই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই।

ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের প্রধান বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান। তিনি সরকার-সমর্থক। এম এ আউয়াল সরকারের সঙ্গে থাকা তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব। আইডিএর মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ২০০৫ সাল থেকে আন্দোলনে, বিপদে এবং নির্বাচনে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন, এখনো সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এই জোট গঠন কেন? এই প্রশ্নের জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আছি, মাঠেও আছি। আমরা বসন্তের কোকিল নই।’

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও ‘সম্মিলিত ইসলামী মহাজোট’ নামে একটি ৩৪-দলীয় মোর্চার সঙ্গে জোট করেন। গত ১১ আগস্ট প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা চুক্তি করেন এরশাদ। তাঁর এই জোট গঠন সরকারকে সহায়তার লক্ষ্যে বলে গুঞ্জন আছে।

এর বাইরে আছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন, প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটসহ দু-তিনটি দল। নির্বাচনের আগে ইসলামী আন্দোলন ও বিএনপি জোট ছেড়ে আসা ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী) কারও সঙ্গে জোট করে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আছে। এরশাদও তাদের জোটে টানার চেষ্টা করছেন। আর ইসলামী আন্দোলনের এখন পর্যন্ত অবস্থান, কারও সঙ্গেই জোট না বাঁধা।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনূছ আহমাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের মৌসুম এলে ছোট দলগুলো দৌড়ঝাঁপ করে, ক্ষমতার অংশীদার হওয়া যায় কি না, চেষ্টা-তদবির করে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এসব মতলবি জোট বেশি দিন টিকে না।’

পরিচিত ইসলামি দলগুলো মোটা দাগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এই দুই শিবিরে বিভক্ত। এর মধ্যে সরাসরি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে সৈয়দ বাহাদুর শাহ ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। এর বাইরে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ও মুফতি রুহুল আমিনের খাদেমুল ইসলামের সমর্থন আছে সরকারের ওপর। বিএনপির সঙ্গে ২০-দলীয় জোটে আছে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফতে মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ)।

২০ দলের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি আবদুর রব ইউসুফী প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের আয়োজনে এসব জোট হচ্ছে। যাতে মানুষকে দেখানো যায় যে আলেম-ওলামারা তাদের সঙ্গে আছেন। তাঁর দাবি, সরকার যা-ই করুক, নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ থাকলে এসব জোট কোনো কাজে আসবে না।

অনেক দিন ধরে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট বিএনপির দিকেই বেশি যায়। এবার এই ‘ভোটব্যাংকের’ দিকে নজর বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর মিত্র জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। ইসলামপন্থীদের বেশি করে কাছে টানা গেলে বিএনপি-জামায়াতের ভোট কমবে, এই কৌশল থেকে ধর্মভিত্তিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সরকার সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এরই অংশ হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এ ছাড়া নির্বাচনে জামায়াতের প্রভাব খর্ব করারও একটা লক্ষ্য আছে।

২০১৩ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের উত্থানের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইসলামি দল ও ব্যক্তিদের ওপর বিশেষ নজর দেয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুদান বাড়িয়ে দেয়। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সাংসদদের জন্য নির্বাচনী এলাকায় ছয়টি করে মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করা হয়। আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থী ভোটার ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সমর্থন সরকারের পক্ষে আনার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।