Thank you for trying Sticky AMP!!

খালেদার মুক্তির সিদ্ধান্তে স্বস্তি, বিদেশে যেতে না দেওয়ার শর্তে আপত্তি

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে খুশি দলটির শীর্ষ নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, এটা পুরো জাতির জন্য একটি স্বস্তির সংবাদ। তবে এ মুক্তি অনেক দেরিতে হলো। আর ছয় মাস বাড়িতে থাকা ও বিদেশ যেতে না পারার যে শর্তারোপ করা হয়েছে, তাতে আপত্তি নেতাদের।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, যদি প্রয়োজন হয়, তবে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়া উচিত। এটা তাঁর অধিকার। কোনো কোনো নেতা বলেছেন, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রিত না হলে আরও আগেই মুক্তি পেতেন খালেদা জিয়া। সরকারের সব কাজে ঢিলেমির অভিযোগও করেছেন কোনো কোনো নেতা।

আজ মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ-সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, সম্প্রতি মুক্তির জন্য নতুন করে কোনো আবেদন করা হয়নি। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত তাঁদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। খন্দকার মোশাররফ আরও জানান, অনেক আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল। সরকার যেহেতু করোনা থেকে সব বিষয়েই সিদ্ধান্ত দেরিতে নেয়, এখন দেরিতে নেওয়াতেই সময়টা এসে গেছে, তাই মুক্তির কথা বলেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই আশাবাদী ছিলাম। আগে আইনের মাধ্যমে হয়নি, পরিবার আবেদন করেছিল। এত দিন পরে সরকারের বোধোদয় হয়েছে। দেশ যখন বড় সংকটের সমানে, সে সময় তাদের বোধোদয় হয়েছে। এটা আশ্চর্যের কিছু না, প্রত্যাশা অনেক আগেই ছিল। বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রিত না হলে আরও আগেই হতো।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে ‘একটা স্বস্তির বিষয়’। আমীর খসরু বলেন, ‘ওনার শরীর ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরো জাতির মধ্যে একটা শঙ্কা কাজ করছিল। তার ওপরে এখন করোনার ভীতি তৈরি হয়েছে। খালেদা জিয়ার ঝুঁকি এবং জাতি যে ঝুঁকিতে পড়েছে, তা থেকে একটা স্বস্তি মিলবে। এখন মানুষ নিজের অস্তিত্ব নিয়েই চিন্তা করছে। দেরিতে হলেও তিনি চিকিৎসার সুযোগটা পেয়েছেন, এটা সমস্ত জাতির প্রত্যাশা ছিল। ওনার সুস্থ হয়ে ওঠাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। দেশের রাজনীতির সুস্থতার জন্য তাঁর মতো এক নেত্রী অপিরহার্য। তিনি গণতন্ত্রের জন্য বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু কখনোই আপস করেননি।’

আজ আইনমন্ত্রী বলেছেন, ছয় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। অন্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারবেন না।

এ বিষয়ে আমীর খসরুর বক্তব্য, ‘ওনার স্বাস্থ্যের জন্য যদি দরকার হয়, তবে তাঁকে এ সুযোগ দিতেই হবে। সবাই তো বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করছে। তাঁর জন্য আইন ভিন্ন হবে কেন? তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বাইরে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরা সবাই এ সুযোগ নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত গেছেন। স্বাস্থ্যের অধিকার সবারই আছে। এটা সাংবিধানিক অধিকার। শুধু তাঁর না, সকলেরই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান খালেদা জিয়ার মুক্তিতে খুশি। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইটস ওকে। আমরা তো মুক্তি চাচ্ছিলাম। এটা ভালো সিদ্ধান্ত, আমি খুশি। বিষয় হলো, বাসায় থাকতে হবে। বাইরে যেতে পারবেন না। এটা কেন করল, এটা বুঝতে পারছি না। উনি অসুস্থ, তা সবাই জানে। অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার দরকার হলে যেতে পারবেন না, এ ধরনের বিধিনিষেধ যুক্তিসংগত? যদি দরকার হয়, উনি পারবেন না কেন?’

সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চান কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অবশ্যই।’

তবে নজরুল ইসলাম খানের কথা, ‘এখন যে সময়ে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে, যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগও সীমিত। আকাশপথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বন্ধ। আগে মুক্তি দিলে একটা অপশন থাকত। উনি যাবেন কি যাবেন না, সেটা পরের ব্যাপার। আগে এ মুক্তি দিলে তাঁর সুযোগটা থাকত। এখন হয়তো তাঁকে, এখন সেল্ফ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সময়টা এখন বিপক্ষে।’

খালেদা জিয়া এমনিতেই মুক্তি পেতেন বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘উনি মুক্তি পেতেনই। এটা প্রমাণ হলো যে সরকারই আটকে রেখেছিল। তারাই মুক্তি দিল, যা হয়তো আদালতেই হতো।’

বিএনপির এক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে গতকাল সোমবার থেকে গুঞ্জন শুনতে পান অনেকেই। কিন্তু মুক্তির বিষয়টি কেউ আগে আঁচ করতে পারেননি। তবে নেতা–কর্মীরা খুশি হয়েছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবে সই করেননি প্রধানমন্ত্রী

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার রাতে মুক্তি পাচ্ছেন না। তার মুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবে এখনো স্বাক্ষর করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ৯টার দিকে তিনি বলেন, প্রথমত কোনো বন্দীকে রাতের বেলায় মুক্তি দেওয়া হয় না। 

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রস্তাবে এখনো অনুমোদন করেননি প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাত্র তাঁর কাগজপত্র তৈরি হয়েছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে তিনি অনুমোদন দেবেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারি আদেশ জারি করবে তারপরই তিনি মুক্তি পাবেন। 

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেছেন, তারা কোনো আদেশ পাননি। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাালয়ের কারা শাখারা কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পাঠিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 


আরও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের