Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি-সা. সম্পাদককে ‘অব্যাহতি’ দিলেন ‘বিদ্রোহীরা’

ফয়েজ উল্লাহ ও দীপক শীল

বামপন্থী ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুনর্গঠিত কমিটি ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে পরিচিত অংশের সদস্যরা। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি একে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় অনুষ্ঠিত ‘ছাত্র ইউনিয়নের’ জাতীয় পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন ‘বিদ্রোহীরা’।

গত বছরের ২২ নভেম্বর ৪০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ফয়েজ উল্লাহকে সভাপতি ও দীপক শীলকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। সম্মেলনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতবিরোধ ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে তখন থেকেই সংগঠনের একটি অংশ পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। এই অংশটি তখন ‘বিদ্রোহী অংশ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

বিদ্রোহীদের বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ছাত্র ইউনিয়নকে নামসর্বস্ব সংগঠন বানানোর অপতৎপরতার কারণে সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সহসভাপতি সুমাইয়া সেতু, কে এম মুত্তাকী, সরোজ কান্তি এবং কার্যকরী সদস্য এনি সেন, প্রান্ত রণি, গৌরচাঁদ ঠাকুর, পিনাক দেব, জি কে সাদিক ও খায়রুল হাসান জাহিনকে লঘু দণ্ড হিসেবে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে সহসভাপতি হিসেবে অনিক রায়, জহর লাল রায়, সাদ্দাম হোসেন এবং কার্যকরী সদস্য হিসেবে আসাদ মণি, আশরাফি নিতু, মিঠুন চন্দ্র মহন্ত, তাহমিদ চৌধুরী, তাসবিবুল গণি, রেশমি সাবা ও ফাহিম পবনকে কেন্দ্রীয় দায়িত্বে নিযুক্ত করেছে জাতীয় পরিষদ। পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নজির আমিন চৌধুরী জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রাগী নাঈম।

চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘বিদ্রোহী’ অংশের সাত নেতাকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন ফয়েজ উল্লাহ-দীপক শীলরা। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘সংগঠনে বিশৃঙ্খলা ও উপদলীয় তৎপরতার’ অভিযোগ তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সম্পা দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটিও গঠন করা হয় সেদিন। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে সংগঠনটির অন্তর্কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। দুই অংশ পৃথকভাবেই কর্মসূচি পালন করছিল।

১২ এপ্রিল জরুরি সম্মেলন ডাকেন ‘বিদ্রোহীরা’। ফয়েজ-দীপকদের আমন্ত্রণ করা হলেও তাঁরা সেখানে যাননি। ‘বিদ্রোহীরা’ তখন ফয়েজ-দীপককে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে পুনর্গঠিত একটি কমিটি ঘোষণা করেছিলেন। তবে ফয়েজ-দীপকরা ওই কমিটিকে ‘অবৈধ ও ভিত্তিহীন’ বলে আখ্যা দেন। এরপর গতকাল জাতীয় পরিষদের সভা করে আজ ফয়েজ-দীপকদের অব্যাহতি দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের ঘোষণা দিলেন ‘বিদ্রোহীরা’।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি ভিত্তিহীন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি। কারণ, এতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতুকে সহসভাপতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।’ ফয়েজ বলেন, এ ধরনের কাজগুলো ছাত্র ইউনিয়নকে বিতর্কিত করার জন্য করা হচ্ছে। এটি একধরনের ষড়যন্ত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাসহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্র ইউনিয়ন আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। একে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এ ধরনের তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জবাবে ‘বিদ্রোহী’ অংশ ঘোষিত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম ফয়েজ উল্লাহ-দীপক শীলদের ‘বিভেদপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগঠনে ভাঙন ধরানোর জন্য তাঁরা (ফয়েজ-দীপক) বিভিন্ন সময়ে নানাজনকে বহিষ্কার করেছেন। এই বহিষ্কারগুলো বিভেদপন্থীদের কার্যক্রম। তাঁদের আমরা বিভেদপন্থী হিসেবেই চিহ্নিত করতে চাই।’