Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা দক্ষিণে ১১ কাউন্সিলরসহ ২২২ জন 'বিদ্রোহী' আ.লীগে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান ১৯ জন কাউন্সিলর এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি। তাঁদের মধ্যে ১১ জন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। দক্ষিণ সিটিতে (ডিএসসিসি) ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৭৩টি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা অন্তত ২২২।

গত ২৯ ডিসেম্বর ডিএসসিসিতে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থনের তালিকা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরদিন দুটি ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তন করে সংগঠনটি। দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের দাবি, দল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও অনেক ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তন করতে পারে। গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থন বদলাতে পারে অথবা প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেওয়া হতে পারে।

আগামী বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর আগেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা চলছে বলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সূত্র জানায়।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোট হয় নির্দলীয়ভাবে। যদিও ঢাকার দুই সিটিতে কাউন্সিলর পদেও প্রার্থীদের দলগত সমর্থন দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দলের সমর্থন না পেয়েও যাঁরা নির্বাচন করেন, তাঁরা ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে পরিচিত।

নির্বাচনী মাঠে দলীয় সমর্থনবঞ্চিত ১১ কাউন্সিলর

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দলীয় সমর্থন না পেলেও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াহিদুল হাসান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতান মিয়া, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সালাউদ্দিন আহমেদ ঢালী, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জসিম উদ্দিন আহমেদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সি কামরুজ্জামান, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তারিকুল ইসলাম, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল শাহ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নুল হক, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন খান এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে আছেন ময়নুল হক।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তাই দলীয় সমর্থনের জন্য আবেদন করেছিলাম, পাইনি। এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে দলের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলাম।’

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সুলতান মিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানান তিনি।

৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দলের সমর্থনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। এখন স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬৬টি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের। ৮টিতে বিএনপির ও ১টিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কাউন্সিলর রয়েছেন।

১ নম্বর ওয়ার্ডে এবার কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে খিলগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলমকে। দলীয় সমর্থন পাননি এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান। তিনিও আওয়ামী লীগের খিলগাঁও থানা কমিটির নেতা। তাঁর বিশ্বাস, শেষ মুহূর্তে দল সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে।

বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক। এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন আটজন। এর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন। বাকি দুজন স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে দল।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বৈধ প্রার্থী সাতজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসিবুর রহমান। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সালে এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানসহ দলেরই চার নেতা।

হাসিবুর রহমান বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের পর বিদ্রোহী প্রার্থী কে, তা স্পষ্ট হবে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোজাম্মেল হক। এই ওয়ার্ডে বৈধ প্রার্থী ১১ জন। এর মধ্যে সাতজনই আওয়ামী লীগের। তাঁদের একজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তিনি ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। ক্যাসিনো–কাণ্ডে নাম আসার পর আর ফেরেননি তিনি। কোনো কারণ ছাড়াই সিটি করপোরেশনের বোর্ড সভায় টানা অনুপস্থিতির কারণে গত অক্টোবরে তাঁকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বরের শেষ দিকে তিনি গোপনে দেশে ফিরেছেন। নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন।

বাবার জায়গায় ছেলে, ভাইয়ের জায়গায় ভাই

৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তাঁরা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন না। তবে মন্নাফীর জায়গায় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর ছেলে আহমদ ইমতিয়াজকে দলীয় সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন হুমায়ুন কবিরের ভাই মকবুল হোসেন।

কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পাওয়া মকবুল হোসেন লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতা। পরিবার নয়, যোগ্যতা দিয়েই দলের সমর্থন পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

দুই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এবার ডিএসসিসির ২৫ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। এর মধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি আনোয়ার ইকবাল এবং ৩৮ নম্বরে আহমদ ইমতিয়াজ।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর বাইরে কোনো ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী থাকবে না। দলের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এই বিষয়ে তদারকি করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দলের সমর্থনবঞ্চিত প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন।’