Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল এখন ছাত্রলীগের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলো ভরে গেছে ছাত্রলীগের স্লোগান আর বক্তব্যে। মুছে ফেলা হয়েছে অন্য সংগঠনের দেয়াললিখন। ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে সারা বছরই ছাত্রসংগঠনগুলোর বক্তব্য বা আহ্বানসংবলিত দেয়াললিখন চোখে পড়ে। গত কয়েক বছরে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ ও বামপন্থী সংগঠনগুলোর দেয়াললিখনে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল দেয়ালগুলো। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গত কয়েক দিনে অন্যদের দেয়াললিখনগুলো মুছে নিজেদের বক্তব্যে দেয়ালগুলো রাঙিয়ে তুলেছে ছাত্রলীগ। বাম সংগঠনগুলোর অভিযোগ, তাঁদের না জানিয়েই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটি এই কাজ করেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক লিটন কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, দেয়াল চুনকাম কারা করেছেন, সেই তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নেই। দেয়াললিখনের বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতি প্রশাসনের কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই বলেও জানান তিনি৷

গত বৃহস্পতিবার ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত কমিটি। ওই সভায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সহাবস্থান ও সমান সুযোগের বিষয়টি। সব সংগঠনের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়। ছাত্রদলের নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের দাপটে’ তাঁরা ক্যাম্পাসছাড়া। বিরোধীপক্ষ বলতে ক্যাম্পাসে রয়েছে কেবল বামপন্থী সংগঠনগুলোই।

বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ মুখে সহাবস্থানের কথা বললেও বাস্তবে তাঁদের আচরণ একেবারেই বিপরীত। ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচারও মানছে না ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটি। ক্যাম্পাসে ও হলগুলোতে সংগঠনটির ‘দখলদারি রয়েছে’ উল্লেখ করে তাঁরা বলছেন, না জানিয়ে দেয়াললিখন মুছে ফেলার বিষয়টি ওই ‘দখলদারির’ বহিঃপ্রকাশ।

বামপন্থী সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একদমই না জানিয়ে ছাত্রলীগ দেয়াললিখনগুলো মুছে দিয়েছে। দেয়াললিখনের মাধ্যমে সংগঠনগুলো তাদের বক্তব্য শিক্ষার্থীদের জানাতে চায়। বিভিন্ন সময় আমরা যখনই দেয়াললিখন করতে গিয়েছি, সেখানে অন্য কোনো সংগঠনের দেয়াললিখন থাকলে আমরা তাদের বলে এবং জানিয়েই সেটি করেছি। কিন্তু ছাত্রলীগ এসবের তোয়াক্কা করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তারা যেভাবে দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে, দেয়ালগুলোতেও সেই দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলো ভরে গেছে ছাত্রলীগের স্লোগান আর বক্তব্যে। মুছে ফেলা হয়েছে অন্য সংগঠনের দেয়াললিখন। ঢাকা, ১৩ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাসের অভিযোগ, কোনো রকম না জানিয়েই দেয়াললিখনগুলো মুছে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের চরিত্র হচ্ছে মুখে মধু, অন্তরে বিষ। এসি রুমে বসলে তারা সহাবস্থান ও সমান সুযোগের কথা বলে, কিন্তু বাইরে এলে চরিত্র বদলে যায়।’

ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, ‘কোনো সংগঠনের দেয়াললিখন মুছতে হলে আমরা তাদের অনুমতি নিয়ে সেটা করি। অন্যরাও দেয়াললিখনের আগে আমাদের জানান। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সংস্কৃতি। কিন্তু দেখে আসছি, ছাত্রলীগ মুখে যা বলে, কাজের ক্ষেত্রে তারা একেবারেই বিপরীত ও সাংঘর্ষিক আচরণ করে।’

দেয়াললিখন করে দেবে ছাত্রলীগ
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কয়েক দিন আগে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে উপাচার্য ভবন পর্যন্ত দেয়ালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নৌকায় ভোট চেয়ে দেয়াললিখন করা হয়। তখন এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে নতুন করে দেয়াললিখন করে সংগঠনটি। গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এলাকার দেয়ালের একাংশে দুটি বামপন্থী সংগঠনের দেয়াললিখন রয়েছে। আর কোথাও অন্য কোনো সংগঠনের দেয়াললিখন চোখে পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বেশির ভাগ দেয়ালে এখন ছাত্রলীগের নানা কথা লেখা। আর কয়েকটি দেয়াল চুনকাম করে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেয়াললিখনগুলো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে করা।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, অন্য কোনো সংগঠনের দেয়াললিখন মুছে দেওয়া হয়নি। যেসব দেয়াল ফাঁকা ছিল, শুধু সেগুলোতেই আমরা দেয়াললিখন করেছি। কোথাও হয়তো দুই-একটা লাইন মোছা হয়েছে। এ রকম দুই-একটা ঘটনা ঘটে থাকলে কী আর করার আছে! তাদের আমরা দুই-একটা দেয়াললিখন করে দেব।’