Thank you for trying Sticky AMP!!

দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য সুশাসন দরকার

টমাস এল ভাজদা, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মুখ্য উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, নাগরিক সমাজের মতামতের সুযোগ সৃষ্টি আর অর্থনৈতিক পরিবেশের উন্নতি—মূলত এই তিনটি বিষয়ের ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাফল্য নির্ভর করছে। এই অভিমত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মুখ্য উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টমাস এল ভাজদা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় এবং প্রবৃদ্ধির হার ভালো। তবে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য সুশাসন দরকার।

রাজধানীর গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে গতকাল সোমবার সকালে প্রথম আলোসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন টমাস এল ভাজদা। তিন দিনের সফরে গত শনিবার ঢাকায় আসেন তিনি। সফরের শেষ দিনে ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। টমাস ভাজদা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা একে অন্যের পরিপূরক, প্রতিপক্ষ নয়। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় এ বার্তাটি তিনি দিয়েছেন। মার্কিন ব্যবসায়ীরা সেসব দেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান, যেখানে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় এবং আইনের শাসন ও ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষিত থাকে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর তাঁরা নজর রাখছেন।

জ্যেষ্ঠ এই মার্কিন কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, অব্যাহত প্রবৃদ্ধি আর উন্নয়নেরই স্বীকৃতি। তিনি মনে করেন, এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতাই বাড়াবে না, তা দেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। ঢাকায় অবস্থানকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দেখা করেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মুখ্য উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাজদা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনের যোগসূত্রের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল জানতে চাইলে টমাস ভাজদা বলেন, এ বিষয়টিতে তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন। কাজেই ভবিষ্যতে কতটা উন্নতি হলো, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্বার্থেই অধিক মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা জরুরি। এ জন্য এখানকার পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, দুর্নীতি রোধ—এসব বিষয় শুধু মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্যই নয়, অন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছুদিন ধরেই ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশকে যুক্ত হতে বলছে। এই উদ্যোগে বাণিজ্যের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলেও এখন নিরাপত্তা সহযোগিতার কথা আসছে। অথচ বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই বলেছে, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয় ব্যতিরেকে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার বিষয় থাকলে এ উদ্যোগে যুক্ত হবে না। এ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য উপ-সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ অঞ্চলের জন্য একটি স্বপ্নকে সামনে তুলে ধরেছি। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো দেশকে কোনো রকম জোর–জবরদস্তি করা হচ্ছে না। নৌচলাচলে স্বাধীনতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সামুদ্রিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, অবৈধ মাছ ধরা বন্ধের বিষয়গুলো এখানে আছে। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশেরও আগ্রহ রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশকে আমরা চাপ দিচ্ছি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস চীনের বিআরআইয়ের পাল্টা উদ্যোগ হিসেবে অনেকে মনে করেন, এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে টমাস ভাজদা বলেন, এ ধারণাটা ঠিক নয়। বিআরআই হচ্ছে চীনের ব্যবসা পরিচালনার মডেল। আর ইন্দো–প্যাসিফিক হচ্ছে একটি রূপকল্প। এটা এমন এক উদ্যোগ, যেখানে সবার যুক্ততা থাকবে, যা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।