Thank you for trying Sticky AMP!!

নীলফামারী-১ আসনে : আ. লীগে প্রার্থীজট, জাপা নির্ভার

আফতাব উদ্দীন ,খায়রুল আলম , রফিকুল ইসলাম , জাফর ইকবাল

ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-১ আসন। দুই উপজেলা শহরই অনগ্রসর। সড়কের অবস্থা করুণ। তারপরও সরকারি দলের সাংসদের মুখে উন্নয়নের কথা।

উন্নয়ন আর নিজের জনপ্রিয়তার ফিরিস্তি দিয়ে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান সাংসদ আফতাব উদ্দীন। তবে সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, আফতাব উদ্দীন এলাকায় বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন তাঁর ভাই-ভাতিজা-জামাতার কর্মফলের কারণে। ফলে আগামী নির্বাচনে তাঁর পক্ষে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে না। তিনি ছাড়াও এ আসনে আধা ডজন নেতা মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

ক্ষমতাসীন দলের এই যখন অবস্থা, সেখানে বিএনপি আছে নির্ঝঞ্ঝাট অবস্থায়। খালেদা জিয়ার ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী এবারও দলটির একমাত্র প্রার্থী বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

নীলফামারী-১ জাতীয় সংসদের ১২তম আসন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন প্রথম, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম (মহাজোটের হয়ে) সংসদ নির্বাচনে

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফতাব উদ্দীন সরকার ৮০ হাজার ৪৩০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির জাফর সিদ্দিকী পান ১৫ হাজার ৮৪৮ ভোট। বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে।

আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি
আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই বর্তমান সাংসদ আফতাব উদ্দীন অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে নিজের জনপ্রিয়তার ফিরিস্তি তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুই মেয়াদে ডিমলা সদর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। দুই মেয়াদে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছি। এরপর সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি। এসবই আমার জনসমর্থনের বড় প্রমাণ। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন আমিই পাব।’

তবে এ আসনে মনোনয়ন চাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আলম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

২০০০ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ২০০৫ সালে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বাড়ি ডোমার উপজেলা শহরে।

কেন প্রার্থী হতে চান? খায়রুল আলম বললেন, ‘উনি (আফতাব) পাঁচ বছর করছেন, এবার আমি করতে চাই। তা ছাড়া ওনাকে নিয়ে এলাকায় কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।’ সাংসদকে নিয়ে কিসের বিতর্ক? জবাবে খায়রুল জানান, উনি পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছেন। ওনার অনুগত লোকজন ভালো কাজ করছেন না। উনি ওয়াদা করে তা বাস্তবায়ন করেন না।

খায়রুলের বাইরে আরও দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান। তাঁদের একজন সাবেক সাংসদ হামিদা বানু। তিনি অষ্টম সংসদে দলীয় মনোনয়নে সাংসদ হয়েছিলেন। নবম সংসদে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হন। বাড়ি ডোমার উপজেলা শহরে। তবে ব্যবসায়িক কারণে ঢাকায় থাকেন।

অন্যজন হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আমিনুল হোসেন সরকার। তিনি ২০০৫ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। যোগ দেন আওয়ামী লীগে। বাড়ি ডোমারের হলহলিয়া গ্রামে। তালিকায় আরও আছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপসাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক সরকার ফারহানা আক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাবেক এমএলএ মরহুম আবদুর রহমান চৌধুরীর নাতি ইমরান কবির চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) তছলিম উদ্দিন। তাঁরা সবাই বিভিন্নভাবে এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ অতি প্রাচীন ও বড় দল। এখানে একাধিক প্রার্থী থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। কাজ মূল্যায়ন করে যোগ্য প্রার্থী বেছে নেবে দল।

জাতীয় পার্টি
এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে সাংসদ হন এই শিল্পপতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফতাবের কাছে পরাজিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনে তিনিই মহাজোটের প্রার্থী বলে প্রচার করে আসছেন।

জাফর ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। ক্ষমতার বাইরে থেকেও গত চার বছর এলাকাবাসীর পাশে আছি।’

বিএনপি ও জোটের শরিক
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন ইসলাম এ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির মামলা হয়। বর্তমানে তিনি পলাতক। তাঁর অনুপস্থিতিতে অনেকটা প্রার্থী-সংকটে পড়ে বিএনপি। এ অবস্থায় ২০০৮ সালে প্রার্থী হন শাহরিনের বাবা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। খালেদা জিয়ার এই ভগ্নিপতি এবারও চূড়ান্ত প্রার্থী বলে জানাচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

ডিমলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, এখানে জোটগত নির্বাচন হলে রফিকুল ইসলাম চৌধুরীই চূড়ান্ত প্রার্থী। জোটগত নির্বাচন হলেও এখানে জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

জামায়াত
এই আসনে জামায়াতের নেতা আবদুস সাত্তার প্রার্থী হবেন বলে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি প্রার্থী হিসেবে কাজ করছি। এখন এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’