Thank you for trying Sticky AMP!!

পুরোনো ধারায় ফিরছে জাপা!

এইচ এম এরশাদ, রওশন এরশাদ, জি এম কাদের
>

*জি এম কাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে
*জি এম কাদেরকে নিয়ে কারও কারও অস্বস্তি ছিল
*পুরোনো ‘ব্যবস্থাপনায়’ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সায়
*জ্যেষ্ঠ নেতাদের কারও কারও নেপথ্য ভূমিকা
*পরিবর্তনে রওশন এরশাদেরও ভূমিকা ছিল

আবারও পুরোনো নেতৃত্বে দল ‘পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায়’ ফিরছে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। তারই অংশ হিসেবে জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রওশন এরশাদকে করা হচ্ছে উপনেতা। মহাসচিব পদ থেকে বাদ পড়া রুহুল আমিন হাওলাদারও গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরছেন বলে জানা গেছে।

জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, জি এম কাদেরকে দল পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরানো এবং দলকে পুরোনো ‘ব্যবস্থাপনায়’ নিতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সায় আছে। কারও কারও নেপথ্য ভূমিকাও রয়েছে। কারণ, জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ শুরু থেকেই জি এম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল। তাঁকে সরানোয় ওই নেতারা খুশি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এই পরিবর্তনে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদেরও ভূমিকা ছিল। তবে অসুস্থতার মধ্যেই জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ হঠাৎ করে কেন ছোট ভাই জি এম কাদেরকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অব্যাহতি দিলেন, তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা চলছে।

জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি আগে থেকে জানতাম না। পার্টির চেয়ারম্যান দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে এটি করেছেন। তবে আমি ব্যাপারটি জানতে গতকাল স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, “এটা আমার ও ভাইয়ের ব্যাপার, কী করা লাগবে আমি দেখব।”’

গতকাল শনিবার জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এক ‘সাংগঠনিক নির্দেশে’ জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে অপসারণ করেন। উপনেতার পদে রওশন এরশাদকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করতে গতকালই জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন এরশাদ।

গত ১ জানুয়ারি এরশাদ দলে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করেন। এর আগে ২০১৬ সালে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করলে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। পরে স্ত্রী রওশনকে জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান করেন। এরই মধ্যে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিলে ‘রওশনপন্থী’ হিসেবে পরিচিত নেতারা নাখোশ হন।

জি এম কাদেরের বাদ পড়াকে নিজের দুই দফায় মহাসচিব পদ খোয়ানোর ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেন জাপার সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রওশন এরশাদ একাধারে একজন ফার্স্ট লেডি, অনেকবারের সাংসদ এবং সর্বশেষ সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। সেখানে তিনি উপনেতা হবেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং এ সিদ্ধান্ত সমাদৃত হবে।’

জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান, এরপর সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা করার পর অস্বস্তিতে পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের অংশটি সুযোগ খুঁজছিল। তারা শুরু থেকেই জি এম কাদেরকে এড়িয়ে চলছিল। আবার জি এম কাদেরও এই দূরত্ব কমানোর ব্যাপারে মনোযোগ দেননি বলে অভিযোগ আছে। ফলে দলীয় অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুপস্থিতি বা এড়িয়ে চলা ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বশেষ ২০ মার্চ এরশাদের ৯০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ অনেকে ছিলেন না। আবার বিগত জন্মদিনের অনুষ্ঠানগুলো পাঁচ তারকা হোটেলে করা হলেও এবার হয়েছে একটি মিলনায়তনে। দলের নেতাদের অনেকের অভিযোগ, দায়িত্ব পাওয়ার পর জি এম কাদের দলকে সাংগঠনিকভাবে জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হননি। অবশ্য জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া নোটিশেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন এরশাদ।

জানা গেছে, হঠাৎ করে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাঁকে যে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে, এমনটা ভাবতে পারেননি জি এম কাদের। তিনি এ বিষয়ে জানতে গতকাল সকালে এরশাদের বাসায় যান। সেখানে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমানও ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা বিস্তারিত জানা যায়নি। জি এম কাদের কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যার (এরশাদ) কাদের সাহেবকে বলেছেন, চিন্তা করার দরকার নেই। আমি দেখব।’

দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, শিগগিরই স্ত্রী রওশন এরশাদকে আরও সাংগঠনিক ক্ষমতা দিতে পারেন এরশাদ। একই সঙ্গে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেওয়া রুহুল আমিন হাওলাদারকেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রুহুল আমিন হাওলাদারকে জাপার কার্যকরী চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যান করা হতে পারে। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৩ ডিসেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মসিউর রহমানকে মহাসচিব করেন এরশাদ। কিন্তু এর পাঁচ দিনের মাথায় এরশাদ তাঁর বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ দেন রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এমনকি দলে তাঁর পরের স্থান বা পদমর্যাদা দেন এরশাদ। যদিও মহাসচিব পদ থেকে বাদ এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়ার পর নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রেখেছিলেন রুহুল আমিন হাওলাদার। সম্প্রতি তিনি সক্রিয় হয়েছেন।

জাপার নেতা-কর্মীদের একটি অংশ মনে করছে, হঠাৎ করে জি এম কাদেরকে সরানোর পেছনে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে পারে। তা হচ্ছে, এরশাদের অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব। একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রওশনের পর জাপার হাল ধরতে আগ্রহী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। দলের সাবেক দুই মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও এই সারিতে আছেন বলে দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।