Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেবেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা । ছবি: প্রথম আলো

কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া ও যোগ্যদের পদায়নসহ চার দফা দাবি আদায়ে ছাত্রলীগ আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবে। সংগঠনের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের দপ্তর সেলে ওই স্মারকলিপি দেবেন।

দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে পদবঞ্চিতরা এ কথা জানান। গত ২৬ মে দিবাগত রাত থেকে এখন পর্যন্ত টানা ২৩ দিন ধরে তাঁরা সেখানে অবস্থান করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান, পদবঞ্চিতদের মুখপাত্র ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন।

পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা বলেছেন, যাঁরা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের বড় অংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। বরং যাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁদের কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। পদ পাওয়া নেতাকর্মীদের একটি পরিচয় আছে, সেটি হলো তাঁরা তাঁদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) মাই ম্যান (নিজস্ব লোক)। এত বড় অনিয়ম ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের এত বড় নজির শুধু ছাত্রলীগের ইতিহাস নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেই নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্রলীগের কমিটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ কর্মীরা প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। কিন্তু সেই মিছিলে হামলা চালানো হয়। হামলার প্রতিবাদে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সেখানেও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়। = ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রহসনমূলক, হাস্যকর ও একপাক্ষিক তদন্ত কমিটি করেন। পরে টিএসসিতে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে আমাদের ওপর ফের হামলা হয়।

পদবঞ্চিতরা দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কাছে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করা হয়েছে। কিন্তু যেসব বিতর্কিত নেতার নাম ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল, সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাঁদের বাদ না দিয়ে উল্টো পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে অভিযোগ তাঁদের। একে 'অপরাজনীতি' হিসেবেও মন্তব্য করেন পদবঞ্চিতরা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ, ছাত্রলীগের কমিটির যে ১৯ জন বিতর্কিত নেতার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের নাম ও পদের নাম প্রকাশ, কমিটিতে যত বিতর্কিত রয়েছে, সবার পদ শূন্য ঘোষণা, পদবঞ্চিতদের মধ্য যোগ্যতার ভিত্তিতে শূন্য হওয়া পদগুলোতে পদায়ন এবং মধুর ক্যানটিন ও টিএসসিতে হামলার সুষ্ঠু বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত ও সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাঈফ বাবু বক্তব্য দেন।

যা যা ঘটেছে
সংকটের শুরু গত ১৩ মে। ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর সেদিন ঘোষণা করা হয় সংগঠনের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটি করতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। কমিটি ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে কয়েকজন নারী নেত্রীসহ ১০-১২ জন আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেদিন রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদবঞ্চিতদের তোপের মুখে পড়ে ফিরে যান। পরদিন সকালে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন পদবঞ্চিতরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে অনশন ও সংগঠন থেকে গণপদত্যাগের মতো কর্মসূচির হুমকিও দেন তাঁরা।

এর পরদিন দুপুরে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গণভবনে ডেকে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্তদের বহিষ্কারে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তার পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটিতে থাকা ‘বিতর্কিত’ ও ‘অযোগ্য’ ৯৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা।

১৯ মে টিএসসিতে ফের মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন পদবঞ্চিতরা। এক দিনের মাথায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বাসে তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। পরের দিন মধুর ক্যানটিনের ঘটনায় ৫ জনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত হওয়ার দুঃখে রাতেই জারিন দিয়া নামের এক নেত্রী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

এরপর ২৬ মে রাতে নবগঠিত কমিটির সবাইকে নিয়ে পরদিন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ। সেদিন দিবাগত রাত থেকে এখনো পর্যন্ত টানা অবস্থানে রয়েছেন পদবঞ্চিতরা।