Thank you for trying Sticky AMP!!

বকা খাইতে খাইতে ঘরেও থাকতে পারছি না: ফেসবুক লাইভে কাউন্সিলর

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম

এলাকার দুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা রাখতে না পারায় মানুষের ‘বকা’ খেতে খেতে ঘরেও থাকতে পারছেন না বলে ফেসবুক লাইভে এসে জানিয়েছেন ঢাকার একজন কাউন্সিলর।

তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান। আনিছুর রহমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় সমর্থন নিয়ে দক্ষিণখান, আশকোনা এলাকার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে কথা বলেন কাউন্সিলর আনিছুর রহমান। উন্নয়নবঞ্চনার ক্ষোভ থেকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কিসের ট্যাক্স দেব আমরা? কিসের সিটি করপোরেশনের অধিবাসী?’

একটি নর্দমার পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভে আনিছুর রহমান বলেন, ‘সুয়ারেজের পানি, এটা ড্রেন না রাস্তা বোঝার কোনো উপায় নেই। মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে করতে, বাপ-মার বকা খাইতে খাইতে ঘরে থাকতে পারছি না। এই যদি হয় একটা রাস্তা এবং এগুলো যদি দেখার কেউ না থাকে। ফেসবুকে, টুইটারে সবাই বাহবা নেওয়ার জন্য বসে থাকে। এই রাজধানী ঢাকায় আমরা কীভাবে বসবাস করি একটু দেখে যান।’

১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে কাউন্সিলর বলেন, ‘আমাদের (ডিএনসিসি) চিফ ইঞ্জিনিয়ার মহোদয় এখানে এসেছিলেন। মেয়র মহোদয় আপনি বারবার আশ্বাস দিচ্ছেন। আমরা তো বাঁচতে চাই। আমাদের বাঁচার একটা ব্যবস্থা করেন। বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাই, আমরা কারও বিরুদ্ধে না।’

একপর্যায়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘আমরা সামান্য একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে কী করতে পারি। মানুষের বকা খাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। কিসের ট্যাক্স দেব আমরা? কিসের সিটি করপোরেশনের অধিবাসী? গ্রামকে গ্রাম উন্নয়ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ঘরছাড়া মানুষকে ঘর দিচ্ছেন। বড় বড় রাস্তা, হাইওয়ে তৈরি হচ্ছে। অথচ রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে আমাদের এই ওয়ার্ড।’

ছবিটি দক্ষিণখানের মেডিকেল রোডের, কাউন্সিলর আনিছুর রহমানের ওয়ার্ডের অনেক রাস্তার চিত্রই এমন

ভিডিওর শেষ দিকে কাউন্সিলর আনিছুর রহমান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৮টি নতুন ওয়ার্ডের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ১৮টি ওয়ার্ডের জনগণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছে। আবার ভোট এলে তাদের কাছে ভোট চাইতে হবে। তিনি বলেন, ‘মানুষ জান দিয়া দিবে আবার যদি ভোট চাইতে আসি এখানে। সুতরাং আমরা ঝাড়ুর বাড়ি খাইতে চাই না। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বিপ্লবের অংশীদার হতে চাই।’

মেয়র, স্থানীয় সাংসদ বা বিশেষ কারও প্রতি ক্ষোভ বা বিরক্তি থেকে ফেসবুক লাইভে এসে এমন অভিযোগ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে কাউন্সিলর আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজের প্রতিই বিরক্ত। ভুল-শুদ্ধ যা-ই হোক, মনের আবেগ থেকে বলেছি। দুই দফায় কাউন্সিলর হলাম, কিছুই করতে পারছি না। এলাকায় গেলে মানুষ পেছন থেকে বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করে।’

কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে কাউন্সিলর আনিছুর রহমান যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন, সেটি দক্ষিণখানের গাওয়াইর স্কুল (প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়) রোডে। তিনি জানান, পুরো দক্ষিণখান এলাকার রাস্তাঘাট, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। ময়লা পানি রাস্তায় উপচে পড়ছে। এ অবস্থায় মানুষ এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে।

ফেসবুক লাইভের প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, ‘মেয়র ফোন করে বলেছেন, এর দায় আমার এবং তোমারও।’ তবে মেয়র তাঁকে এভাবে বলতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কারণ, এভাবে বললে মানুষ আরও হতাশ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং জানতে চেয়েছেন যে আসলে এটা করার (ফেসবুক লাইভ) উদ্দেশ্যটা কী?
মেয়র বলেন, ‘সবাই জানে ১৮টি ওয়ার্ডের অবস্থাই খারাপ। এই ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য একনেকে ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য ৯৭ কোটি টাকা দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু এলাকার যে অবস্থা, এই টাকা যথেষ্ট নয়। আমি ইতিমধ্যে অর্থসচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি।’