Thank you for trying Sticky AMP!!

বিএনপি ছাড়লেন 'ডাল কেলেঙ্কারির' সেই শোকরানা

মোহাম্মদ শোকরানা। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, আলোচিত ব্যবসায়ী ও ‘ডাল কেলেঙ্কারি’ মামলার আসামি হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ শোকরানা দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সোমবার বিএনপির মহাসচিব বরাবর ডাকযোগে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন। সন্ধ্যায় বগুড়ায় নিজ মালিকানাধীন চার তারকা হোটেল নাজ গার্ডেনে প্রথম আলোকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ শোকরানা বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টা পদে ছিলেন। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। পদত্যাগপত্রে শোকরানা লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। এখন থেকে বিএনপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

বিএনপির ওপর কোনো ক্ষোভ বা অভিমান থেকে পদত্যাগ কি না, জানতে চাইলে শোকরানা বলেন, কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ নেই। দল যাঁকে যোগ্য মনে করেছে, গত নির্বাচনে তাঁকেই মনোনয়ন দিয়েছে। অন্য কোনো দলে যোগদানের ইচ্ছে রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করার ইচ্ছে আর নেই।’

বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসন থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোহাম্মদ শোকরানা। এরপর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ আবদুল মান্নানের কাছে তিনি পরাজিত হন। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিনি ফের দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু তাঁর বদলে দলীয় মনোনয়ন পান ওই আসনের সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলাম। নির্বাচনে তিনিও হেরে যান।

১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মো. শোকরানার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে দুদক বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত–আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার তথ্য মেলায় এই নোটিশ দেওয়া হয়। দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের সই করা নোটিশ শোকরানার মালিকানাধীন নাজ গার্ডেনের ঠিকানায় পাঠানো হয়। নোটিশে তাঁকে আগামী ২১ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পদবিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে তিনি জ্ঞাত–আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁর নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে জ্ঞাত–আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান।

নোটিশটি পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় শোকরানা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেন। সরকারি কোনো চাপে দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কি না, জানতে চাইলে শোকরানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের কোনো চাপ নেই। সময় অনেক হলো। ৫০ বছরের বেশি সময় রাজনীতি করলাম। এখন পরিবারকে সময় দিতে চাই। সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতে চাই।’

শোকরানার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ‘ডাল কেলেঙ্কারি’ ও ত্রাণের কম্বল মজুত করার অভিযোগে মামলা হয়। একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনী শোকরানার ১৫টি গুদাম থেকে সাড়ে পাঁচ মেট্রিক টন (১৮ হাজার বস্তা) মসুর ডাল ও বিপুল পরিমাণ ত্রাণের কম্বল জব্দ করে। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। ডাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে শোকরানা ও তাঁর সহযোগী পরিমল কুমার সিংয়ের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। তিনি বিএনপির নেতা হলেও আওয়ামী লীগ আমলে কীভাবে তাঁর মামলা প্রত্যাহার হলো, তা নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা রয়েছে।

এ বিষয়ে শোকরানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের জন্য তারেক রহমান নিজ অর্থে কম্বল কিনে আমার গুদামে রেখেছিলেন। এটি ত্রাণের কম্বল ছিল না। এ ছাড়া ১৬ কোটি টাকার ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করে গুদামে রেখেছিলাম। যৌথ বাহিনী ভুল বুঝেই কম্বল ও ডাল জব্দ করে।’ সব সময়ই তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।