Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোটে উৎসাহ কমে গেছে, নেপথ্যে অর্থনীতি ও নিরাপত্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, মানুষ এখন ভাবে, আমার কী লাভ হবে। ভোটে মানুষ লাভ খুঁজে পায় না। এখানে তার পাওয়ার কিছু নেই। ভোটে মানুষের উৎসাহ কমে গেছে। তবে এর নেপথ্যে অর্থনীতি ও নিরাপত্তা যুগপৎভাবে ক্রিয়াশীল। প্রথম আলোকে দেওয়া তাৎক্ষণিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা
সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান

প্রথম আলো: রাজধানীর দুই সিটির ভোট গ্রহণ শেষ হলো। স্থানীয় সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভোটের গুরুত্বটা কোথায়?

সালাহউদ্দিন: স্থানীয় সরকার গণতন্ত্র চর্চার সূতিকা গৃহ। এখানে যদি ভালো নির্বাচন না হয়, গণতন্ত্র চর্চা না হয় তবে তবে মানুষ আস্থাহীনতায় ভুগবে। এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মানুষ সব প্রার্থীকেই কাছে থেকে চেনে। এখানেই যদি অনীহা ও আস্থাহীনতা থাকে তবে জাতীয় নির্বাচনে আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি না— এটাই রাজনীতি বিজ্ঞানের তাত্ত্বিকদের কথা। যত ভালো হোক বা মন্দই হোক গ্রামের মানুষ কিন্তু তার চেয়ারম্যানকে চেনে। পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব করে মানুষ ওই লোকটার কাছে যায়। এভাবেই মানুষের গণতন্ত্র চর্চার উৎসাহ তৈরি হয়। গণতন্ত্রের প্রতি এভাবেই স্থানীয় মানুষের আস্থা তৈরি হয়। কারণ হলো, তার যেতে পারার একটা চেনা জায়গা থাকে। সামাজিক অবস্থার কারণে হোক, সাহসের কারণে হোক এমপির কাছে তারা তেমন একটা যেতে পারে না। কিন্তু একটা ভরসার জায়গা থাকে তা হলো স্থানীয় সরকার। এখানে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তবে ধীরে ধীরে মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা কমে যাবে। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনের প্রতিও হতাশার সৃষ্টি হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এতে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। তাত্ত্বিকভাবে এটা বলা হয়ে থাকে যে, সুশাসন উন্নয়নের পরিপূরক।

প্রথম আলো: কিন্তু এশিয়ার অনেক দেশে একটা ভিন্নধর্মী বিষয় দেখা যাচ্ছে। কম গণতন্ত্রের দেশগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি উন্নতি করছে।
সালাহউদ্দিন: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটা ভিন্নধর্মী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এখানে কিছুটা বা আধা একনায়কতান্ত্রিক শাসন ভালো করছে। এসব দেশে অপেক্ষাকৃত উন্নয়নের হার, প্রবৃদ্ধির হারও ভালো। সুশাসনের এই আপাত বৈপরীত্য (গভর্নেন্স প্যারাডক্স) গবেষক তথা তাত্ত্বিকদের একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারায় এক ধরনের শ্লথ গতি দেখা গেছে। কিন্তু উন্নয়ন ধারা অব্যাহত আছে।

সালাহউদ্দিন: বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নতি করছে। সেই সত্তরের দশক বা আশির দশকের তীব্র দারিদ্র্য এখন প্রায় তিরোহিত। না খেতে পাওয়ার দারিদ্র্য আমরা দেখেছি ১৯৮০ এর দশকের শেষ পর্যন্ত। সেটা নিঃসন্দেহে এখন নেই। এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সেই ধারা চলছে, গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও। যদিও সামাজিক ও আয় বৈষম্য বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

প্রথম আলো: গণতন্ত্র ও উন্নয়নের এই বিপরীতমুখী ধারা তাহলে কেন?
সালাহউদ্দিন: এর একটা উত্তর হতে পারে মানুষ গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়ে কিছুটা উদাসীন বা প্রত্যাশাহীন হয়ে পড়েছে। ভোটে কে জিতল, কে হারল এ নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব বেশি মাথাব্যথা নেই। মানুষের এখন বেশ অনেক কিছু সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো এই অনাস্থা ও অনীহার একটা কারণ হতে পারে। তবে এর চেয়ে বড় কথা হলো, মানুষ কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না। মানুষ যে কোনো কারণেই হোক রাজনীতি বিমুখ হয়ে গেছে। মানুষ তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে বড় করে দেখছে। কেউ যদি জেতে বা হারে তাতে আর হয়তো তার যায়-আসে না। এটা কিন্তু শেষ বিচারে আস্থা বা নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মানুষ গণতন্ত্রবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শাসক দলের স্থানীয় অতি উৎসাহী বা তৎপর কর্মীদের প্রতি জমে থাকা রাগ মানুষ ঝারার একটা জায়গা পায়। কিন্তু এই রাগ কজনের আছে, বা তা কতটা প্রকাশ করবে সে ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাই প্রধান নিয়ামক। ব্যক্তিগতভাবে অতি দুর্ভোগ না পোহালে এভাবে কেউ যায় না।

প্রথম আলো: শতকরা কত ভোট পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে থেকে এখনো তেমন কোনো উপাত্ত আমরা পাইনি। আমাদের প্রতিনিধিরা সারা দিন ঘুরেছেন। তাদের ধারণা, ভোটার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। কেন এমনটা হলো?

সালাহউদ্দিন: এটা কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়। গত সপ্তাহ খানিক ধরে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল।ভোটের প্রতি মানুষ উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। এখানে তার পাওয়ার কিছু নেই। তবে এর নেপথ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা একইভাবে ক্রিয়াশীল।