Thank you for trying Sticky AMP!!

মানববন্ধন স্থলে তড়িঘড়ি আ.লীগের সমাবেশ

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর শহরে সাংসদের নির্দেশে পুকুর ভরাট করার প্রতিবাদে গতকাল রোববার স্থানীয় সংগঠন পরিবেশ রক্ষা মঞ্চ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু কর্মসূচির স্থলে আওয়ামী লীগ গতকাল জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করায় সংগঠনটি মানববন্ধন করতে পারেনি।

পুকুরটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) ভৈরব উপবিভাগের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) সাংসদ সোহরাব উদ্দিন সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড নির্মাণের উদ্দেশ্যে পুকুরটি ভরাট করবেন। সরকারের কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে সাংসদ পুকুর ভরাটের এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এ বিষয়ে ২২ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘কাবিটার বরাদ্দে পুকুর ভরাট করছেন সাংসদ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের সদস্যরা বলেন, গরিব মানুষের কর্মসূচি কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের অর্থ দিয়ে সাংসদ সরকারি পুকুর ভরাট করছেন। ভরাটের আগে তিনি সওজের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। পুকুরটি ভরাট হলে শহরে জলাবদ্ধতা বাড়বে আর পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য পুকুর ভরাটের বিপক্ষে জনমত তৈরি করতে তাঁরা মানববন্ধনের ডাক দেন।

পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের পক্ষ থেকে চার দিন ধরে শহরে মাইকযোগে প্রচার চালানো হয়। প্রচারের সময় তাঁরা সওজের পুকুরসংলগ্ন রাস্তায় এ মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। সংগঠনটির মানববন্ধনের সময় নির্ধারিত ছিল বেলা ১১টা। এ অবস্থায় হঠাৎ করে গতকাল সকাল ৯টা থেকে তাঁদের কর্মসূচির জায়গায় পৌর পরিষদের ব্যানারে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সংগঠনের সদস্যরা বেলা ১১টার কিছু আগে পূর্বনির্ধারিত জায়গায় অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। তখনো ওই স্থানে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ চলছিল।

সংগঠনটির সদস্যদের অভিযোগ, সমাবেশটি জঙ্গিবাদবিরোধী হলেও সব বক্তা পুকুর ভরাটের যথার্থতা তুলে ধরেন আর সাংসদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তাঁরা ভরাটবিরোধীদের তিরস্কার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাল উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশটি সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র শুক্কুর আলী। বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পৌরসভার প্যানেল মেয়র রুহুল আমিন প্রমুখ।

অন্যদিকে কর্মসূচি পালন করতে না পেরে পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের সদস্যরা নির্ধারিত স্থান থেকে কিছুটা দূরে মানিকখালী সড়কে অবস্থান নেন। সেখানে সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি শরীফ সাদি, কটিয়াদী শাখার সাধারণ সম্পাদক মবিনুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান ও কটিয়াদী পৌর মহিলা বিএম কলেজের প্রভাষক তানভিরুল হক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শরীফ সাদি বলেন, সাংসদেরা হলেন আইন প্রণেতা। অথচ সাংসদ সোহরাব উদ্দিন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবেশ রক্ষা আইন ভঙ্গ করে পুকুর ভরাট করছেন। শুধু তাঁদের কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে সাংসদের ইঙ্গিতে সমাবেশটি করা হয়েছে। সমাবেশস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ রাখা হয়। পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনটির কর্মসূচিতে বাধার সৃষ্টি করে। কৌশল করে এবার সাংসদ ও সাংসদের অনুসারীরা সফল হলেও পুকুর ভরাট বন্ধে তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

অভিযোগের বিষয়ে কটিয়াদী থানার ওসি আব্দুস সালাম বলেন, শান্তি রক্ষায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কারও পক্ষে কাজ করার জন্য নয়।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাংসদ সোহরাব উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

তড়িঘড়ি করে সমাবেশ করার কারণ জানতে চাইলে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশের প্রধান উদ্যোক্তা ও পৌর মেয়র শুক্কুর আলী বলেন, মানববন্ধন করার জন্য ওই সংগঠন কারও অনুমতি নেয়নি। তাঁরা অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেছেন। সংগঠনটির সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, তারা কোনো ভালো কাজ করতে দেয় না।

অনুমতি নিয়ে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, ভালো কাজের জন্য অনুমতি নিতে হয় না।