Thank you for trying Sticky AMP!!

মেয়র হলে জনগণের দাবির অপেক্ষায় থাকব না: তাবিথ

রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু, পানি ও বায়ুদূষণে জনগণকে জীবন্ত মেরে ফেলার অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। আজ শনিবার রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, ভাষানটেক ও মাটিকাটা এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল পল্লবী এলাকায় তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা চালান। ঢাকা, ২৫, জানুয়ারি। ছবি: আশরাফুল আলম

দুপুরে পল্লবীতে এক পথসভায় তাবিথ আউয়াল ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ের পরপরই কিন্তু সিটি করপোরেশন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। ভবিষ্যতে আমরা এমন মেয়র চাই, এমন মেয়র আমরা হব যে আদালতের বা জনগণের দাবির অপেক্ষায় থাকব না। আমরা নিজের কাজ নিজের মন থেকে করব।’

তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘একদিকে মশার জ্বালায় মশার ওষুধ কিনতে হচ্ছে, দূষণের জ্বালায় মাস্ক কিনতে হচ্ছে। দূষণে, ডেঙ্গুতে আমাদের জীবন্ত অবস্থায় মেরে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতেই হবে। পরিবর্তনের প্রতীক হচ্ছে ধানের শীষ।’

তাবিথ আউয়াল মিরপুরে নির্বাচনী প্রচার চালান। ঢাকা, ২৫, জানুয়ারি। ছবি: সেলিম জাহিদ

তাবিথ উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আর মাত্র সাত দিন। এই যাত্রায় আপনারাই হলেন আমাদের আগামী, আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। যদি সবাই ঐক্য থাকেন, তাহলে আমাদের ভোট কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। মনে রাখবেন, আমাদের আবহাওয়া, আমাদের এলাকা, আমাদের উন্নয়ন, আমাদের দেশ—সবকিছু বদলে যেতে পারে। সে সম্ভাবনার জন্যই আপনারা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেবেন।’

তাবিথ আউয়াল মিরপুরে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা বন্ধ, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি এবং গার্মেন্টসকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তাবিথ আউয়াল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মাহফুজ হোসাইন খানকে (ব্যাডমিন্টন) ও নারী কাউন্সিলর পথে মোবাইল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিএনপির নেতা জয়নাল আবদীন ফারুক বলেন, ‘ইভিএম হচ্ছে ভোট চুরির মহা যন্ত্র। এবার ইভিএমে ভোট এধার-ওধার হলে জনগণ আপনাদেরও ওধার করে দেবে।’

পল্লবীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচার। ঢাকা, ২৫, জানুয়ারি। ছবি: আশরাফুল আলম

এর আগে বেলা ১১টায় মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশন কাঁচাবাজারের পাশে পথসভার মাধ্যমে জনসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ। তারা আমাদের সঙ্গে আছেন। নির্বাচনী মাঠে আর কোনো অঘটন ঘটুক, তা চাই না। যত বাধা আসুক আমরা শৃঙ্খলা ভাঙবে না।’

ইভিএমের ভোট গ্রহণের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, ‘আমরা ইসিকে অনুরোধ করছি, সব যুক্তি আমলে নিয়ে এ নির্বাচনের জন্য ইভিএম বন্ধ রাখুন। অন্তত এ নির্বাচনে ব্যালটে ভোট নিন। ভবিষ্যতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা যাবে।’

নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির প্রার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হতাশা প্রকাশ করেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এ জন্য সামগ্রিকভাবে নির্বাচনে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমাদের মনোবল শক্ত আছে, আমরা ইতিবাচক ভূমিকায় আছি। ভোটারদের মন এখন ১ ফেব্রুয়ারির দিকে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে আমরা জয়লাভ করব।’

এরপর মিরপুরের অনিক প্লাজার সামনে পথসভায় তাবিথ বলেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি আপনারা ভোটের মাধ্যমে একটি রায়ই দিতে চান। তা হচ্ছে আর এক মুহূর্তও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাগারে রাখা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মুক্তি চাই। যে দেশে জীবন্ত অবস্থায় মশার কামড়ে মারা যাই, দূষণে মারা যাই, সেই দেশে ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি আপনারাই দিয়েছেন। এখন আপনারাই সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য তাবিথ আউয়ালকে ধানের শীষে, সাজ্জাদ হোসেনকে ঘুড়ি ও মেহেরেন্নেছা হককে আনারস প্রতীকে ভোট দেবেন।’

সেখানে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, এই নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ার ধরে রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে নিতে না পারে, তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে জোরদার করতে এবং অচল ঢাকাকে সচল করতে তাবিথ আউয়ালের কোনো জুড়ি নেই।

বিকেলে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাটিকাটা বাজারে পথসভায় তাবিথ আউয়াল জনগণকে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সামনে সাতটি দিন কঠিন সময় পার করতে হবে। আপনাদের ভয়ভীতি দেখানো হবে, নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। কিন্তু আপনারা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। আসলে ভয় যারা দেখাচ্ছেন, তারা আপনাদের বেশি ভয় পায়।’

মাটিকাটায় তাবিথ আউয়াল আরও বলেন, যে এলাকার বাজারেই যাই, দেখি দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে। এলাকায় শিশু ও মা-বোনেরা রাতে নির্ভয়ে চলাচল করতে পারেন না। তাদের নিরাপত্তার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই করুন, খেলার মাঠ নেই, বাতাস দূষিত। তিনি বলেন, ‘দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য আদালত রায় দিয়েছেন। যাঁরা অতীতে দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা আদালতের রায় মানেননি। জনগণের দাবিও তাঁরা পূরণ করেননি। দায়িত্ব দিলে আমরা এসব দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

এ এলাকায় তাবিথের সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান ধানের শীষের জন্য ভোট চান। তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁর মুক্তির জন্য আমাদের ১ ফেব্রুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ভোট দিয়ে সরকারকে বার্তা দিতে হবে যে ঢাকাবাসী খালেদা জিয়াকে মুক্ত দেখতে চায়।’

এরপর তাবিথ আউয়াল ইসিবি চত্বরে, ভাষানটেক পকেট গেট, ভাষানটেক কাঁচাবাজার, মানিকদী মাঠের মোড়, বালুরঘাটে, আজিজ মার্কেট, হাজী মার্কেট ও আলাউদ্দিনটেকে পথসভা ও গণসংযোগ করেন। এ সময় জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আমিনুল ইসলাম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক এ বি এম রাজ্জাক, যুবদল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, জিয়া পরিষদের মহাসচিব এমতাজ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সব শেষে মিরপুর ১৪ নম্বরে পথসভা করেন তাবিথ আউয়াল। সেখানে এলডিপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন সেলিম ও বিএনপির নেতা শাহিদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।