Thank you for trying Sticky AMP!!

লতিফ সিদ্দিকী বাদ পড়ছেন?

পবিত্র হজ নিয়ে করা ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল এমনকি মন্ত্রিসভা ও ক্ষমতাসীন দল থেকেও তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে জানান, লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে কাল দেশে ফেরার পর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
তবে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কিছু জানেন না। ফোনেও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কিছু বলেননি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়াশিংটনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, তিনিও শুনেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
নিউইয়র্কে সেখানকার সময় রোববার বিকেলে টাঙ্গাইল সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে এটি প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়।
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মন্ত্রীর বক্তব্যে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। সৌদি আরবে হজ পালনরত কয়েকজন বাংলাদেশি মন্ত্রীর মন্তব্যে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে প্রথম আলোকে ফোনে জানিয়েছেন। ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম লতিফ সিদ্দিকীকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার বিকেলে ও শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে।
ঢাকায় লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের খবর প্রচার করা হলেও বিদেশে তাঁর সরকারি কর্মসূচি বহাল আছে। বিবিসি জানায়, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তিনি নিউইয়র্ক সফর শেষ করে মেক্সিকো গেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক একটি পুরস্কার নেবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কে রোববার বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী।’ তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে...।’ তাবলিগ জামাতের সমালোচনা করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তাবলিগ জামাত প্রতিবছর ২০ লাখ লোকের জমায়েত করে। নিজেদের তো কোনো কাজ নেই। সারা দেশের গাড়িঘোড়া তারা বন্ধ করে দেয়।
লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এর আগে সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অনিয়ম করে সরকারি সম্পত্তি বরাদ্দ দেওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকা এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু তখন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন হজ ও প্রধানমন্ত্রীপুত্রকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় দল ও সরকারে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দলেরই কেউ কেউ বলছেন, অসংখ্য অভিযোগের পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ‘লাগামহীন’ হয়ে পড়েন।
দলে প্রতিক্রিয়া: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবিসিকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী একেবারেই কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের মন্তব্য একধরনের অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি তো তাঁকে পেতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে অপসারণ করা হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, সে ধরনের আভাস আছে। এ রকম একটা ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আছে। তিনি বলেন, তাঁর বক্তব্য দলের কেউ সহজভাবে মেনে নেয়নি। এটা নিয়ে দলের মধ্যেও ক্ষোভ ও উদ্বেগ আছে। এখানে সরকারের ভাবমূর্তিরও প্রশ্ন জড়িত। কাজেই এর দায়দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।
গতকাল ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যের সমালোচনা করে দলটির ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, কে কী বলল, তাতে কান দেবেন না। মুখফোঁড় অনেক নেতা আছেন, তাঁরা এমন কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন, ওয়াজেদ কে, সেটাও আপনারা জানেন। আমাদের নাতি জয় কে, সেটাও আপনারা জানেন। এটা নিয়ে প্রশ্ন করার কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী সরকারের শীর্ষ অবস্থানে থেকে এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক নয়। তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
পদত্যাগ চাইল বিএনপি: লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী হজরত মুহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসম্মানজনক বক্তব্য রেখেছেন, তা বাংলাদেশসহ গোটা মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় আবেগে চরম আঘাত। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তাঁর শাস্তি দাবি করেন।
গ্রেপ্তার চান এরশাদ: লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। গতকাল এক বিবৃতিতে এরশাদ বলেন, লতিফ সিদ্দিকী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে তাঁকে অভিযুক্ত করতে হবে। শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না, দেশের প্রচলিত আইনে তাঁর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিবাদ ও তাঁর অপসারণের দাবিতে আজ বুধবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঠিক কাজটিই করেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় যাঁরা ‘বেসামাল’ কথাবার্তা বলেন, তাঁদেরও দ্রুত অব্যাহতি দেওয়া উচিত।