Thank you for trying Sticky AMP!!

সবার নজরে সম্পাদক পদ

প্রায় ৫ বছর পর খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে ওই সম্মেলন হওয়ার কথা। সম্মেলন ঘিরে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। শীর্ষ দুই পদে কারা আসছেন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন-সমীকরণ।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্য দিয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে শেখ হারুনুর রশীদ সভাপতি এবং এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর ৯ মাস পর গঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা শেখ হারুনুর রশীদ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক দুর্বলতাসহ দলের একাংশের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

শেখ হারুনুর রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মোস্তফা রশিদী ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সম্পাদক পদে ছিলেন। নেতা–কর্মীদের কাছে সুজা ‘ভাইজান’ হিসেবেই পরিচিত তিনি। ২০০২ সালে যৌথ বাহিনীর অপারেশন ক্লিন হার্টে গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন। সর্বশেষ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে জেলায় তাঁর অনুসারীরা অনেকটা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই মূলত শেখ হারুনুর জেলার রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতে থাকেন। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন মোস্তফা রশিদীর অনুসারীরা। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা আরও অসহায় হয়ে পড়েন।

জেলা তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন, জেলার রাজনীতিতে সমতা আনার জন্য হলেও মোস্তফা রশিদীর অনুসারীদের মধ্য থেকেই একজনকে সম্পাদকের পদ দেওয়া হবে। তবে ওই পদে শেখ হারুনুর রশীদ গ্রুপেরও শক্ত প্রার্থী রয়েছেন।

জেলার অন্তত ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের নামের সঙ্গে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি এম এম মুজিবুর রহমান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক, সাবেক সাংসদ মোল্লা জালাল উদ্দিনের নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। তবে নানা দুর্বলতা সত্ত্বেও সভাপতি পদে শেখ হারুনুর রশীদের আপাতত বিকল্প নেই বলে মনে করছেন নেতা–কর্মীরা।

এদিকে হারুনুরকে সভাপতি রেখে ওই পদের অন্য আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে কাউকে সম্পাদক করা হতে পারে বলেও নেতা–কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ ক্ষেত্রে আমিনুল  নারায়ণ চন্দের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।

জেলা কমিটির সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক শরফুদ্দিন বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক অসিত বরণ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ মো. আকতারুজ্জামান, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান, প্রয়াত মোস্তফা রশিদীর ভাই এস এম মোর্ত্তজা রশিদী।

সুজিত কুমার অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে মাত্র একটিতে সম্মেলন হয়েছে। বাকিগুলোতে পুরোনো কাউন্সিলররাই থাকছেন। অনেক দিন পর সম্মেলন ঘিরে নেতা–কর্মীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নেতা–কর্মীরা এমন নেতাই চাচ্ছেন, যিনি দলকে ব্যবহার না করে দলের জন্য কাজ করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেবেন সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সাংসদ শেখ সালাহ্ উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

জানতে চাইলে শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে। কে আসবে, কে না আসবে, সেটি শুধু দলীয় প্রধানই ভালো জানেন।’