Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকার ও দলে ভিন্ন নেতৃত্ব দেখতে চাই

বদিউল আলম মজুমদার

তিন বছর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলন নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন যখন হচ্ছে, তখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নানা কেলেঙ্কারি ও বিতর্কের প্রেক্ষাপটও আলোচিত হচ্ছে। তাই অনেকেই দেখতে উদ্‌গ্রীব সম্মেলনের মাধ্যমে কারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন। বিশেষত বিতর্কিতরা বাদ পড়েন কি না। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কী বার্তা দিচ্ছে, তা জানতে অনেক নাগরিকই অত্যন্ত উৎসুক।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে জাতির কাছে অনেক অঙ্গীকার করে। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। তাই কোনো দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে যারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে, দলের দায়িত্ব তাদের দায়বদ্ধ করা। দলের সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি করার মাধ্যমেই এই দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তাই নাগরিক হিসেবে আমরা দেখতে উদ্‌গ্রীব এই সম্মেলনে বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের দায়বদ্ধ করা হয় কি না।

প্রসঙ্গত, এমন দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকার ও দলের নেতৃত্ব ভিন্ন হতে হয়। তাই আমরা আরও দেখতে চাই দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে সরকারের নেতৃত্ব থেকে পৃথক করা হয় কি না। এই পৃথক্‌করণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের আজ কোনো প্রতিপক্ষ নেই। আওয়ামী লীগকে নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখার কোনো শক্তিই এখন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেই আজ সরকারের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করতে হবে।

একসময় মনে করা হতো রাজনৈতিক দল অপ্রয়োজনীয় এবং অনেক সমস্যার উৎস। তাই জর্জ ওয়াশিংটন থেকে শুরু করে আমেরিকার জাতির পিতারা রাজনৈতিক দলের কঠোর সমালোচক ছিলেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। তবে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক দল হতে হবে গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ। একই সঙ্গে আদর্শভিত্তিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির ধারক। কিন্তু আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো নীতি-আদর্শের বালাই নেই। আমরা দেখতে চাই বর্তমান সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার কোনো পথরেখা রচিত হয় কি না।

আমাদের কোনো কোনো রাজনৈতিক দল শুধু নীতি-আদর্শবিবর্জিতই নয়, তারা দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নেরও মূল ধারক-বাহক। কোনো বড় দুর্নীতি ও অপকর্মই এখন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া হয় না। বস্তুত, রাজনীতি বর্তমানে আমাদের দেশে বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এবং এই ব্যবসার বড় কারবারি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো। তাই আমরা দেখতে চাই আমাদের রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করার আকাঙ্ক্ষা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসুক।

টানা ১১ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে দলের অভ্যন্তরে এবং দলের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অনেক জঞ্জাল জমেছে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি বেসামাল পর্যায়ে পৌঁছেছে। উন্নয়নের রাজনীতির নামে অনেক মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে, অভিযোগ আছে দুর্নীতির। সম্রাট, শামীম ও তুফান সরকারের মতো সারা দেশে অনেক দুর্বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে, যারা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। ফলে বিদেশে অর্থ পাচার বাড়ছে, ধনী-গরিবের বৈষম্য প্রকট হচ্ছে এবং সমাজে বিভক্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগের আগত নেতৃত্ব শুধু সৎ, যোগ্য হলেই হবে না, তাঁদের হতে হবে প্রজ্ঞাশীল ও সাহসী, যাতে তাঁরা সব পুঞ্জীভূত জঞ্জাল সাফ এবং বিভক্ত জাতিকে একতাবদ্ধ করতে পারেন। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এমন আশা কি আমরা করতে পারি না?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)