Thank you for trying Sticky AMP!!

সাংসদপুত্রদের দ্বন্দ্বে আ.লীগে উত্তাপ

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শামা ওবায়েদ, অাতমা হালিম ও জামাল হোসেন

কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-২ আসনের সাংসদ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতিনিধি হিসেবে এলাকার রাজনীতি সামলেছেন তাঁর বড় ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী। আর এখন প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যাচ্ছে ছোট ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরীকে, যা মানতে পারছেন না আয়মন।

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সাজেদার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারদের এই দ্বন্দ্ব উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। তবে বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করেছেন তাঁর মেয়ে শামা ওবায়েদ। 

আওয়ামী লীগ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনীতিতে এবং আন্দোলন-সংগ্রামে যে কজন নারী রয়েছেন, তাঁদের একজন সাজেদা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জেল-জুলুম সহ্য করে আওয়ামী লীগের পতাকা উড্ডীন রেখেছিলেন সাজেদা চৌধুরী। কিন্তু এলাকার রাজনীতিতে সাজেদা যাঁদের কাছে টেনে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁরাই সাজেদাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন এবং নিজেদের আখের গোছাতে তৎপর হন।

এ কারণে ‘সাজেদা আওয়ামী লীগের কেমন প্রার্থী?’ আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীকে প্রশ্ন করা হলে তাঁদের উত্তর দাঁড়ায়, ‘সাজেদা ভালো, তবে কাছের মানুষটি ভালো না।’ কিছুদিন আগ পর্যন্ত (২১ মার্চ) বড় ছেলে আয়মন আকবর ওরফে বাবলু চৌধুরী ছিলেন সাজেদার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তিনি দলের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি দেখছেন ছোট ছেলে শাহদাব আকবর চৌধুরী। তিনি প্রবীণ নেতা-কর্মীদের আবারও দলে সক্রিয় করছেন।

এ নিয়ে দুই ছেলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন চরমে। আয়মনের দাবি, মা তাঁকে নিয়েই এলাকায় যেতে চান। তিনিই মায়ের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী। গত ২১ মার্চের পর আয়মন আকবর এলাকায় এসেছেন বলে শোনা যায়নি। তবে শাহদাব আকবর মাঝেমধ্যেই আসছেন, কখনো মায়ের সঙ্গে, আবার কখনো একা। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন।

হালে সাজেদার দুই ছেলের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ সহিংস আকারে এলাকায় আওয়ামী রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে। আয়মন আকবরের সমর্থক বাদলের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে শাহদাবের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আয়মন আকবর বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। মাকে (সাজেদা) ছোট ভাই আটকে রেখেছেন। আমি আমার মাকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’

শাহদাব আকবর বলেন, ‘পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মায়ের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। আমার প্রত্যাশা, আগামী নির্বাচনের সময় মা ঘরে থাকবেন, আমরা তাঁর কর্মীদের নিয়ে গ্রামগঞ্জে ঘুরে ভোট সংগ্রহ করে সাজেদা চৌধুরীকে নির্বাচিত করব।’

সাজেদা চৌধুরীর বাইরে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতমা হালিম। ২০১৩ সালে তাঁর গাড়িবহর সালথায় ঢোকার পথে সাজেদার সমর্থকদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আহত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আতমা হালিম বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। দীর্ঘদিন ধরে আমি এ লক্ষ্যে এলাকায় গণসংযোগ করে আসছি। হামলা হলেও আমি লক্ষ্য থেকে সরে যাইনি।’

দলের মনোনয়ন চান সাজেদার সাবেক এপিএস ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক জামাল হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী ওরফে জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা কাজী দেলোয়ার হোসেন, জেলা কৃষক লীগের নেতা লায়েকুজ্জামান। এলাকায় নিজেদের মতো করে গণসংযোগ চালালেও এই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, যদি সাজেদা চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, তাহলে তাঁরা সভানেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবেন। 

বিএনপি
২০০৮ সালের নির্বাচনে সাজেদা চৌধুরী ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামা ওবায়েদ পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৭২৬ ভোট। সাজেদার রাজনৈতিক জীবন, ভাবমূর্তি, ব্যক্তিত্ব কোনো কিছুর কাছেই তুল্য ছিলেন না শামা ওবায়েদ।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে শামা যে ভোট পেয়েছিলেন, তা তাঁর ব্যক্তি ইমেজের জন্য নয়, প্রয়াত বাবার ইমেজে। তবে গত নয় বছরে অনেক পরিপক্ব শামা। বিএনপির চেয়ারপারসনের সুনজরে পড়ায় তাঁর থেকে বয়সী ও প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাদের ডিঙিয়ে গত সম্মেলনে শামাকে ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় মাঝেমধ্যেই ছোট পরিসরে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুলের নামও শোনা যাচ্ছে। এর আগে তিনি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমরা দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। আমি ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি, নিজের মনোনয়নের কথা ভাবছি না। আমি মনে করি, দলই আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’

শহীদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তবে দল যাঁকে মনোনয়ন দেয়, তিনি তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন। 

অন্যান্য দল
ফরিদপুর-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা জাকের পার্টির সভাপতি মসিউর রহমান ওরফে যাদু মিয়া। তিনি গণসংযোগ করছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ফরিদপুর শাখার সভাপতি রফিকুজ্জামান জানান, সিপিবির প্রার্থী হিসেবে নগরকান্দা উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

আর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইয়াহিয়া বলেন, দলের প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী শফিকুর রহমান ওরফে স্বপন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিয়া আলমগীর হোসেনের নামের প্রস্তাব কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।