Thank you for trying Sticky AMP!!

সাংসদ পঙ্কজের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

সাংসদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সাংসদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও নৈরাজ্যের অভিযোগ তুলেছেন দলের এক নেতা। গতকাল সোমবার বরিশাল নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সাংগঠনিক উপজেলা কাজিরহাটের আওয়ামী লীগের সহ–প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র। তিনি সাংসদের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ–বাণিজ্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, অবৈধভাবে অর্থসম্পদ অর্জনসহ ১৬টি অভিযোগ তুলে ধরেন।

সঞ্জয় চন্দ্র মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য এবং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ‘সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের নির্বাচনী এলাকায় অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছেন। তাঁর অপকর্মের বিরুদ্ধে যাঁরাই কথা বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। আমিও তাঁর সন্ত্রাসী, হামলা-মামলা এবং নৈরাজ্যের শিকার।’

নিয়োগ–বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে সঞ্জয় চন্দ্র বলেন, সাংসদ ভুয়া ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৯টি কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেন। যার মধ্যে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে চাকরি নেন সাংসদের আপন ভাইয়ের স্ত্রী। নিয়োগ–বাণিজ্যের মাধ্যমে সাংসদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এই অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে তিনি (সঞ্জয়) পঙ্কজ দেবনাথের ভাইয়ের স্ত্রী কল্যাণী দেবনাথ, বিদ্যানন্দপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল মিয়াসহ ৪১ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ দুর্নীতি দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-৩৮১। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দুদক মামলাটির তদন্ত শুরু করে। এরপর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হয়ে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি দুদক বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান তদন্ত করছেন।

মামলা করায় সাংসদ পঙ্কজ ক্ষিপ্ত হন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল পঙ্কজ দেবনাথ তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার দুটি পা, একটি হাত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পঙ্গু করে দেয়। আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ওই মামলায় আমি ১৮ দিন কারাবন্দী ছিলাম। এতেই ক্ষান্ত হননি সাংসদ। ২০১৮ সালের ১২ জুন মেহেন্দীগঞ্জ নতুন ডাকবাংলোর ভিআইপি ১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মেরে মৃত ভেবে নদীতে ফেলে দেয়।’

লিখিত বক্তব্যে সঞ্জয় চন্দ্র অভিযোগ করেন, পঙ্কজ দেবনাথ গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চরে দেড় হাজার একর জমি থেকে বছরে প্রায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আলিমাবাদ ইউনিয়নের শ্রীপুরের গাগড়িয়ার চরে তাঁর চাচাতো ভাই রাম কৃষ্ণ দেবনাথ হাজার হাজার একর জমি ভুয়া খতিয়ান খুলে ঘর তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। রাতের আঁধারে ভুয়া রেজল্যুশন করে স্কোডিং দেখিয়ে জনপ্রতি ৬০ হাজার টাকা করে নিয়ে ৮০০ বন্দোবস্ত কার্ড অনুমোদন দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাংসদ ডিও লেটার দ্বারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বালুমহালের দরপত্র বন্ধ করে তাঁর চাচাতো ভাই রিপন দেবনাথ ও আপন ভাই মনজ কুমার দেবনাথের মাধ্যমে অবৈধ বালু তুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সঞ্জয় আরও অভিযোগ করেন, সাংসদ আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ–বাণিজ্য করেছেন। শুধু নিয়োগই নয়, টেন্ডারবাজি, সরকারি খাদ্যগুদামে সিন্ডিকেট, জেলা পরিষদের ঘাট দখল করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তহবিলের নামে টেন্ডারবাজি করে দুই উপজেলা থেকে ১৫ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। টিআর, কাবিখার খাদ্যশস্য সরকারিভাবে ৪০ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১২-১৫ হাজার টাকা মূল্য দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের ইজারা দেওয়া ছয়টি ঘাট দখল করে রাখায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এসব করে বিপুল অর্থ-বৈভবের মালিক হয়েছেন সাংসদ। সাংসদের ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ১০ তলা বাড়ি, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও পরিবহন ব্যবসা রয়েছে। নিজ গ্রামে বিলাসবহুল বাড়িসহ একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বালুমহাল ও খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয় সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী। এসব বিষয়ে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ শিক্ষক নিয়োগে উৎকোচ গ্রহণ প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে সাংসদদের কোনো ভূমিকা নেই। সে ক্ষেত্রে উৎকোচ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি কখনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ভবিষ্যতেও থাকব না। রাজনৈতিক চরিত্র হরণের যে ধারাবাহিকতা চলছে, তার অংশ হিসেবেই আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয়েছে।’