Thank you for trying Sticky AMP!!

৩৪ বছর পর কমিটি, সেটি নিয়েও দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রাম কলেজে সদ্য ঘোষিত কমিটির শীর্ষ দুই পদে নিজেদের লোক না থাকায় পৌনে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেছে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত কলেজের সামনের সড়কে এ অবরোধ করা হয়। অবরোধ চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও পথচারীরা।

সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ২৫ সদস্যের চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনের চট্টগ্রাম নগর কমিটি। কমিটিতে নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মাহমুদুল করিমকে সভাপতি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের অনুসারী সুভাষ মল্লিককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ফেসবুকে সেই কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

আশির দশকের শুরু থেকেই দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে একক দখলদারি বজায় রেখেছিল ছাত্রশিবির। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের পেছনের গেটে মিছিলে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের নেতা তবারককে হত্যা করে তারা। এরপর ১৯৮৪ সালে এই কলেজের ছাত্রাবাসে ঘুমন্ত অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী শাহাদাতকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা। ওই বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। কিন্তু কমিটি কলেজে কোনো অনুষ্ঠানই করতে পারেনি। তখন থেকে কলেজে একক আধিপত্য ধরে রেখেছিল শিবির। তবে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কলেজে আধিপত্য হারায় ছাত্রশিবির। এরপর থেকে কলেজে ছাত্রলীগের তিনটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ পক্ষগুলোর মধ্যে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৩৪ বছর পর ঘটিত নতুন কমিটি নিয়ে এবার দ্বন্দ্বে জড়াল ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ।

মহানগর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটির ২৫ সদস্যের মধ্যে ছয়জন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চারজন নুরুল ইসলামের অনুসারী। বাকি ১৫ জন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো দুই শীর্ষ পদে নিজেদের লোক না থাকায় কমিটির তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরপরই ফেসবুকে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন আ জ ম নাছির উদ্দীনের ছয় অনুসারীই। এরপর কমিটি বিলুপ্তের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে তাঁদের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মী কলেজের সামনে এসে জড়ো হন। বেলা ১১টার সময় তাঁরা কলেজের সামনের সড়কে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তাঁরা একটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সময়ে কলেজের ভেতরে নতুন সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিকের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা সুভাষ ও তাঁর অনুসারীদের ধাক্কা দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেন। তাঁরা কলেজ থেকে বের হয়ে চকবাজারের দিকে চলে যান। এ সময় দুটি পটকা ফাটানো হয়। একটি প্রাইভেট কারের কাচও ভাঙচুর করা হয়। এরপর বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করতে দেননি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় সড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

কলেজে বেলা একটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পরীক্ষার সময় নির্ধারিত ছিল। পাশাপাশি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তিসংক্রান্ত কার্যক্রমও ছিল। ফলে ঘটনার সময় পরীক্ষা ও ভর্তিসংক্রান্ত কাজে কলেজে আসা শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা আতঙ্কিত ছিলেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ এ কে ফজলুল হক।

এদিকে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা না হলে পাল্টা কমিটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন পক্ষের নেতা ওবায়দুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অর্থের বিনিময়ে এবং প্রায় ৬০ শতাংশ নিজেদের পক্ষের লোকদের রেখে কমিটি ঘোষণা করেছেন। কোনো আলোচনা ছাড়া রাতের অন্ধকারে ঘোষণা করা এ কমিটি আমরা মানি না।’
তবে সুভাষ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজে তাঁদের (নাছির উদ্দীন পক্ষের) কোনো অবস্থান নেই। যেহেতু তাঁরা শীর্ষ পদে আসেননি, তাই একটু লাফালাফি করছে। দুদিন পর সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।’

কমিটি এবং দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যার বিষয়ে জানতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ছাত্রলীগের সড়ক অবরোধের বিষয়ে চকবাজার থানার পরিদর্শক মো. নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। এ জন্য তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। তবে আমরা তাঁদের সরিয়ে দিই।’ পটকা ফাটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুটি বাজি জাতীয় কিছু ফাটানো হয়। তবে কারা ফাটিয়েছে, জানি না।’