Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্রলীগের কাছে অসহায় হল প্রশাসন, পায় না ফি

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনটি ছাত্র হলে শিক্ষার্থী ওঠায় ছাত্রলীগ। এসব শিক্ষার্থী কোনো ফি পরিশোধ করেন না। বিনিময়ে তাঁরা ছাত্রলীগের মিছিলে অংশ নেন।

  • একজন শিক্ষার্থীকে হলে উঠতে জামানত ফিসহ প্রথমে ৭৫০ টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করতে হয় ১০০ টাকা।

  • তিনটি ছাত্র হলে ৭৬৬ আসনের বিপরীতে বৈধভাবে থাকছেন ১৭৭ জন। বাকি ৬৮৯ জন কোনো ফি না দিয়েই ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে থাকছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্র হলে ৭৬৬টি আসনের বিপরীতে বৈধভাবে থাকছেন ১৭৭ শিক্ষার্থী। বাকি ৬৮৯ জন কোনো ধরনের ফি না দিয়েই হলে অবস্থান করছেন। ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে তাঁরা বছরের পর বছর হলে থাকছেন। তবে ছাত্রী হলে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে হলে উঠতে হলে জামানত ফিসহ প্রথমে ৭৫০ টাকা দিতে হয়। এরপর প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করতে হয় ১০০ টাকা। কিন্তু হলের অবৈধ শিক্ষার্থীরা ফি না দিলেও ছাত্রলীগের ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।

হল প্রশাসনের দায়িত্বে আছেন এমন অন্তত পাঁচ শিক্ষক ও কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনটি ছাত্র হলে শিক্ষার্থী ওঠায় ছাত্রলীগ। এসব শিক্ষার্থী কোনো ফি পরিশোধ করেন না। বিনিময়ে তাঁরা ছাত্রলীগের মিছিলে অংশ নেন।

‘হল প্রশাসনের কঠোরতা না থাকায় অবৈধভাবে শিক্ষার্থীরা হলে থাকছেন। আমি প্রতি মাসে ১০০ টাকা ফি দিয়ে থাকি। আমার ছাত্রত্ব না থাকলেও সভাপতি হিসেবে হলে আছি। ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও হলে অবৈধভাবে থাকেন। শিক্ষার্থীরা হলে থাকার জন্য ছাত্রলীগের কাছে আসেন। আমরা তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দিই। তাঁদের ফি দেওয়া উচিত।’
মো. ইলিয়াস মিয়া

২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল ছাত্রদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল চালু হয়। এতে ৪০টি কক্ষে ১৬০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। সম্প্রতি ওই হল সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এতে আরও ৭৩টি কক্ষে ৩০২ শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু সম্প্রসারিত অংশ হস্তান্তরের আগেই ছাত্রলীগ নিজেদের অনুসারী শিক্ষার্থীদের ওঠায়। এ হলে বৈধভাবে থাকছেন ৭০ জন।

বঙ্গবন্ধু হলের একজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের মাধ্যমে হলে উঠেছি। তাই কোনো ফি দিচ্ছি না। বিনিময়ে মিছিলে যাই।’

২০১০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চালু হয় কাজী নজরুল ইসলাম হল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী ছাত্রী হল ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল। কাজী নজরুল ইসলাম হলে ১৬০ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বৈধভাবে থাকছেন ৫৩ জন। আর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের শয্যাসংখ্যা ১৪৪টি। বৈধ শিক্ষার্থী ৫৪ জন।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল ভৌমিক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সভা করেছে। শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে। আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা এভাবে হলে উঠেছেন। আমরা সেটি ভাঙব।’

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা সবকিছু নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন।

হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। শেখ হাসিনা ছাত্রী হল রোববার উদ্বোধন হবে। এতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রথমে আবেদন ফরম নেওয়া হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের তোলা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
এ এফ এম আবদুল মঈন, উপাচার্য

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী ছাত্রী হলে ৫২টি কক্ষে ২০৮ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানে গাদাগাদি করে ৩০৬ জন ছাত্রী থাকছেন। তাঁরা হল প্রশাসনের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করেই হলে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু হল ঘুরে দেখা গেছে, হলের সম্প্রসারিত অংশের দ্বিতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত অন্তত ৬২টি কক্ষের সবকটিতেই শিক্ষার্থী তুলেছে ছাত্রলীগ। কেউ কেউ বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করছেন। হলের এই অংশ এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, তিনি প্রাধ্যক্ষ হওয়ার আগে থেকেই হলে অনিয়ম চলছে। হলের সম্প্রসারিত অংশ হস্তান্তরের আগেই শিক্ষার্থীরা হলে উঠে গেছে। এখন তাঁরা নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন কক্ষ থেকে তিনি অন্তত ৬০টি বৈদ্যুতিক হিটার উদ্ধার করে ভেঙে ফেলেছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া ১৫ বছর ধরে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে থাকেন। একসময় তাঁর কক্ষে একাধিক সদস্য থাকলেও এখন তিনি একাই ৩০০১ নম্বর কক্ষে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। বিবাহিত ও কন্যাসন্তানের জনক।

মো. ইলিয়াস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হল প্রশাসনের কঠোরতা না থাকায় অবৈধভাবে শিক্ষার্থীরা হলে থাকছেন। আমি প্রতি মাসে ১০০ টাকা ফি দিয়ে থাকি। আমার ছাত্রত্ব না থাকলেও সভাপতি হিসেবে হলে আছি। ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও হলে অবৈধভাবে থাকেন। শিক্ষার্থীরা হলে থাকার জন্য ছাত্রলীগের কাছে আসেন। আমরা তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দিই। তাঁদের ফি দেওয়া উচিত।’

উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, হলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। শেখ হাসিনা ছাত্রী হল রোববার উদ্বোধন হবে। এতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রথমে আবেদন ফরম নেওয়া হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের তোলা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। অবৈধভাবে কেউ হলে থাকতে পারবেন না বলে তিনি জানান।