Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাবিতে শবনম জাহানকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের বিক্ষোভ

শবনম জাহানকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের বিক্ষোভ। ৪ আগস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ নির্বাচনের দিন সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধারের ঘটনায় পদাবনতি পাওয়া শিক্ষক শবনম জাহানকে আগের পদে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ চার দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। দুটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের এই মোর্চার নেতারা বলেছেন, শবনম জাহানকে পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের এই বিক্ষোভ হয়। তাদের অন্য তিন দাবি হলো ‘কলেজছাত্রীকে হেনস্তাকারী’ জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন এ কে এম মাহবুব হাসানের অপসারণ, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাস-দখলদারি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। প্রগতিশীল ছাত্র জোটভুক্ত সংগঠন দুটি হলো ছাত্র ইউনিয়ন (ফয়েজ-দীপক) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ)।

আজ দুপুরে মধুর ক্যানটিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনে যায়। সেখানে হয় সমাবেশ। প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি রায় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সংগঠক কাজী রকিব হোসাইন বক্তব্য দেন।

সমাবেশে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতারা বলেন, একদিকে দেশে যেমন চলছে ভোট ডাকাতির সরকারের শাসন, সেভাবেই একটি ভোট ডাকাতির ডাকসু নির্বাচন করতে গিয়ে সিল মারা ব্যালট নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা খেয়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন শবনম জাহান। এ রকম ঘৃণিত একজন ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার মানসিকতাই প্রকাশ পায়। অন্যদিকে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন একজন কলেজছাত্রীকে যেভাবে হেনস্তা করেছেন, তা মোটেই শিক্ষকসুলভ আচরণ নয়। তাই তাঁকে অপসারণ করতে হবে।

নেতারা আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের চূড়ান্ত দখলদারি, সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব বিরাজ করছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবার জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। আমরা নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নির্মাণ ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনের ভোট শুরুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে আগেই সিল দেওয়া ব্যালট পেপারভর্তি ব্যালট বাক্স উদ্ধারের পর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে হলটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ শবনম জাহানকে পদ থেকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শবনম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ওই অনিয়মের ঘটনায় ২০২০ সালের ২৯ জুলাই তাঁকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পদাবনতির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালেই শবনম জাহান উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২ ডিসেম্বর তাঁকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল করলেও তা বিচারাধীন থাকা অবস্থাতেই গত ২৬ জুলাই শবনমকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পুনর্বহাল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।

এদিকে ২৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছবি তুলতে এসেছিলেন কলেজপড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। এক নারী সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন এ কে এম মাহবুব হাসানের বিরুদ্ধে।