Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন মার্ক্সীয় অর্থনীতিবিদ ও ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইকোনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পাটনায়েক

নব্য উদারতাবাদের শিক্ষা শুধু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী তৈরি করছে: প্রভাত পাটনায়েক

জনগণের ‘অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট’ (সহজাত বুদ্ধিবৃত্তি) তৈরির পরিবর্তে এই নব্য উদারতাবাদের যুগে এমন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে, যেটা আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের জন্য বুদ্ধিবৃত্তি তৈরি করছে। এটি শিক্ষা থেকে মহত্ত্বকে উধাও করে দিচ্ছে। নব্য উদারতাবাদ শিক্ষাকে কতিপয়ের জন্য বিশেষ সুবিধায় পরিণত করে। নব্য উদারতাবাদের সংকট বিশ্বের সর্বত্র একটি চরম কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা তৈরি করছে। এই কর্তৃত্ববাদ শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আয়োজিত একটি সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন মার্ক্সীয় অর্থনীতিবিদ ও ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইকোনোমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রভাত পাটনায়েক। ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের একাংশের (রাগীব-রনি) পক্ষ থেকে ‘নব্য উদারতাবাদের গোলকধাঁধায় শিক্ষা: সংকট থেকে উত্তরণের পথ’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে যুক্ত হয়ে প্রভাত পাটনায়েক বলেন, বি–উপনিবেশায়নের (উপনিবেশবাদ থেকে সামগ্রিক মুক্তির প্রক্রিয়া) পর তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ স্বীকার করে নিয়েছিল যে শিক্ষা হতে হবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে এবং বিনা মূল্যে বা তুলনামূলক কম খরচে। কিন্তু নব্য উদারতাবাদ এর পুরোপুরি উল্টো। নব্য উদারতাবাদ শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করে এবং বেসরকারীকরণ ঘটায়। ফলে দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্তরাও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এমন ব্যবস্থায় টাকা যার, শিক্ষা তার। বরাদ্দ কম হওয়ায় এই নব্য উদারতাবাদের যুগে পাবলিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ছে। এ ব্যবস্থায় শিক্ষায় খরচকে একটি বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয়। কারণ, এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বড় চাকরির নিশ্চয়তা দেয়। শিক্ষার্থীদের আত্মকেন্দ্রিক, ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড ও শিক্ষায় বিনিয়োগের ফল পেতে আগ্রহী করে তোলাই এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য। নব্য উদারতাবাদ শিক্ষাকে কতিপয়ের প্রিভিলেজে (বিশেষ সুবিধা) পরিণত করে।

প্রভাত পাটনায়েক বলেন, জনগণের অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরি করা ছিল শিক্ষাব্যবস্থার মূল ধারণা। এখন ধারণাটি হচ্ছে, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বায়িত ব্যবসার অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরি। কারণ, বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা আছে। এসব শাখায় তাদের লোক নিয়োগ করতে হয়। সব দেশে তারা একই ধরনের লোক নিয়োগ করতে চায়। এ জন্য তৃতীয় বিশ্বের সর্বত্র তাদের একই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। নব্য উদারতাবাদী এই ব্যবস্থার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। সেটি হয়ে থাকলে নব্য উদারতাবাদী পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তার জন্য একটি যথোপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা লাগবে। প্রয়োজন পড়বে স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের, যারা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণ করবে না। তৃতীয় বিশ্বের জন্য এমন শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, যা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ বুদ্ধিজীবী তৈরি করবে, যাঁরা জনগণের পক্ষে কথা বলবেন।

প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে হবে পাবলিক (সরকারি)। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জনগণের অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরি করে না। তারা নির্দিষ্ট কর্মবাজারের জন্য প্রশিক্ষিত মানুষ তৈরি করে। জনগণের অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরির পরিবর্তে এই নব্য উদারতাবাদের যুগে এমন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পুঁজির জন্য অর্গ্যানিক ইন্টেলেক্ট তৈরি করছে। এটা শিক্ষা থেকে মহত্ত্বকে উধাও করে দিচ্ছে। নব্য উদারতাবাদের সংকট বিশ্বের সর্বত্র একটি চরম কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা তৈরি করছে। অনেক দেশে এটি ফ্যাসিবাদের জন্ম দিচ্ছে। এই কর্তৃত্ববাদ শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। উপনিবেশবাদের কারণে বাংলায় অনেক প্রাণহানি ও শোষণ হলেও ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বইয়ে তার উল্লেখ নেই।

ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক আদনান আজিজ চৌধুরী সেমিনার সঞ্চালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এ অংশের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি। এই অংশের সভাপতি রাগীব নাঈম ছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতারাও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। কয়েকটি দেশের ছাত্র ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশ করে ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশ। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা এতে যোগ দিয়েছিলেন।