Thank you for trying Sticky AMP!!

কোরবানির ঈদ তাকওয়ার পরীক্ষা

ঈদ মানে আনন্দ। কোরবানির ঈদ মানে নৈকট্য লাভের আনন্দ। কোরবানি হলো আল্লাহর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো বস্তু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। ঈদ আনন্দ, বারবার ফিরে আসে যে উত্সব, তা–ই ঈদ। ইবাদত বা আনুগত্য, অনুরাগ ও আত্মত্যাগ ছাড়া পূর্ণ হয় না। প্রিয়তমের জন্য প্রিয় বস্তু বা বিষয় উৎসর্গকরণ বা বিসর্জন দেওয়াই কোরবানি।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন: ‘তোমরা কখনো প্রকৃত পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তা ব্যয় করবে, যা তোমরা ভালোবাসো। তোমরা যা ব্যয় করো আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৯২)।

কোরবানির সময়
জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানি করা যায়। প্রথম দিন, তথা ১০ জিলহজ, অর্থাৎ ঈদের দিন কোরবানি করা উত্তম। কোরবানির পশু দিনে জবাই করাই শ্রেয়। বিশেষ কোনো ওজর থাকলে রাতেও জবাই করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘সব সম্প্রদায়ের জন্য আমি কোরবানির বিধান দিয়েছি, তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর ওপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৩৪)।

কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম: ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে ধারালো অস্ত্র দ্বারা সযত্নে জবাই করবেন। জবাইয়ের সময় কোরবানিদাতাদের নাম বলা বা পড়ার প্রয়োজন নেই। নাম না বললে বা ভুল বললেও সঠিক কোরবানিদাতার পক্ষেই কবুল হবে। জবাইয়ের পর দোয়া করবেন: ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নি/মিন্না/মিনহু/মিনহুম।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমার বা আমাদের অথবা তার বা তাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। আমিন।’

যেকোনো মুসলিম নারী ও পুরুষ কোরবানির পশু জবাই করতে পারেন। কোরবানি নিজে জবাই করা উত্তম। না পারলে কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন। জবাইয়ের সময় উপস্থিত থাকতে পারলে ভালো। জবাইয়ের দোয়া পড়া সুন্নত, দোয়া না জানলে বা না পড়লেও কোরবানি হয়ে যাবে। অন্যকে দিয়ে জবাই করালে তার চাহিদামতো সম্মানী–হাদিয়া দিয়ে তাকে খুশি করতে হবে।

কোরবানির গোশত
কোরবানির গোশত এক-তৃতীয়াংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিতে হবে এবং এক-তৃতীয়াংশ নিজের পরিবারের জন্য রাখতে হবে। প্রয়োজনের অধিক সবটুকু বিলিয়ে দেওয়াই যথার্থ। তবে প্রয়োজন বেশি থাকলে পুরোটাও রাখা যায়। বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য অথবা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে অল্প পরিমাণে দীর্ঘ সময়ের জন্যও সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব; তবে গোশত খাওয়া ওয়াজিব নয়। কোনো অসুবিধা না থাকলে কোরবানির গোশত খাওয়া ও খাওয়ানো সুন্নত।

কোরবানির ঈদ–সংশ্লিষ্ট আমলসমূহ
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আমলগুলো হলো: ৯ জিলহজ আরাফাতের রোজা রাখা। ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ) বলা। ঈদের সকালে (চাঁদ ওঠার পর থেকে পশু জবাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত) কোনো প্রকার ক্ষৌরকর্ম না করা। ১০ জিলহজ সকালে পুরুষদের ঈদের নামাজ আদায় করা। ঈদগাহে যাওয়া–আসার পথে সরবে তাকবির বলা। সম্ভব হলে ঈদগাহে এক পথে যাওয়া, অন্য পথে আসা। পশু জবাইয়ের পর নখ কাটা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষৌরকর্ম করা। গরিবদের দান করা, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের আতিথেয়তা প্রদান ও গ্রহণ। স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া। স্থানীয় মুরব্বি ও আপনজনদের কবর জিয়ারত করা।

রোজা রাখা নিষেধ
বছরে মোট পাঁচ দিন রোজা রাখা নিষেধ। পয়লা শাওয়াল, অর্থাৎ রমজানের ঈদের দিন এবং ১০, ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ কোরবানির ঈদের দিন ও পরবর্তী আরও তিন দিন। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) হাদিসে উদ্ধৃত করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘তোমরা এই দিনগুলোতে রোজা রেখো না, কারণ এই দিনগুলো পানাহার ও খেলাধুলা ও আনন্দ করার জন্য’ (আল জুমাল)। দুই ঈদের দিনে রোজা সর্বতোভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ কোরবানির ঈদের পরবর্তী তিন দিন কেবল হজ সম্পাদনরত হাজিদের জন্য রোজা রাখার অনুমতি ও এখতিয়ার রয়েছে, অন্যদের জন্য নয়। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ‘ইয়াওমুল আরাফা’ বা হজের দিন আরাফাতে অবস্থানরত হাজিরা রোজা পালন করবেন না। অন্য সবাই রোজা পালন করতে পারবেন। সওয়াব পাওয়া যায়।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম–এর সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com