Thank you for trying Sticky AMP!!

রমজানে 'ইহতিসাব' বা আত্মমূল্যায়ন

রমজান হলো তাকওয়ার জন্য, তাকওয়ার মূল কথা হলো নিয়ন্ত্রিত সুশৃঙ্খল জীবন। রমজান শেষে আমাদের দেখা দরকার আমরা রমজানের লক্ষ্য কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের সিয়াম সাধনা কতখানি সার্থক হয়েছে। রমজানে আমরা এক মাস রোজা পালন করলাম, বাকি এগারো মাস রোজার আদর্শে চলতে পারব কি না। আমার বাকি জীবন নামাজের আদলে পরিচালিত করতে পারব কি না। রমজানে আমরা তারাবিহসহ বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করি। কোরআনের নির্দেশ আমার ব্যক্তিজীবন, পরিবার ও সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারছি কি না; সত্যতা, পবিত্রতা ও প্রেমিকতা কতটুকু অর্জন করেছি?

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমার হিসাব নেওয়ার আগে নিজের হিসাব নিজে করে রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের হিসাব নিকটে এসে গেছে, তবু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ১)। কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমার হিসাবকিতাব পাঠ করো; আজ তোমার হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ১৪)। 

পবিত্র রমজানের ফজিলতসংক্রান্ত তিনটি হাদিসে এর সুফলপ্রাপ্তির জন্য ‘ইমান’ তথা বিশ্বাস এবং ‘ইহতিসাব’ তথা সওয়াব ও কল্যাণের আশা ও আত্মজিজ্ঞাসার শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান (পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস) এবং ইহতিসাবের (আত্মজিজ্ঞাসা) সঙ্গে রমাদান মাসে রোজা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৮, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩১, হাদিস: ৩৭)। ‘যে ব্যক্তি ইমান (পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস) এবং ইহতিসাবের (আত্মপর্যালোচনা বা আত্মসমালোচনা) সঙ্গে রমজান মাসে রাত জাগবে (তারাবিহ পড়বে, ইবাদত করবে), তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৭, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা: ৩০, হাদিস: ৩৬)। ‘যে ব্যক্তি ইমান (পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস) এবং ইহতিসাবের (আত্মমূল্যায়ন) সঙ্গে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪)। 

‘ইহতিসাব’ মানে অনুসন্ধান, সমালোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই, মূল্যায়ন, ফলাফল প্রত্যাশা, পুণ্য, নেকি বা সওয়াবের আশা ও আত্মজিজ্ঞাসা ইত্যাদি। মুহাসাবা শব্দটি আরবি হিসাব শব্দ থেকে এসেছে। হিসাব শব্দটি এসেছে ‘হাসব’ শব্দ থেকে; যার আভিধানিক অর্থ হলো যথেষ্ট, পর্যাপ্ত, যথাযথ ইত্যাদি। ‘মুহাসাবা’ অর্থ হিসাব–নিকাশ করা, মূল্যায়ন করা, পর্যালোচনা করা, তুলনামূলক মূল্যায়ন ইত্যাদি। ইহতিসাব ও মুহাসাবা একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। 

আমরা রমজানে রোজা রাখি, তারাবিহ পড়ি; ঈদের চাঁদ উঠলেই মনে করি ইবাদতের ছুটি হয়ে গেছে। এই ছুটির অলীক আনন্দে অনেকের সেদিনের মাগরিবের ফরজ নামাজও ছুটে যায়। সাতাশ দিন অতি যত্নে খতম তারাবিহ পড়ে আটাশতম দিনে তারাবিহর নামাজকেই ছুটি দিয়ে দেন কেউ কেউ; কারও কারও এশার নামাজও তরক হয়ে যায়। 

এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের রাতে ইবাদতে মশগুল না হয়ে, অন্যায় রকম আনন্দ-ফুর্তি করা রমজানে তার ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ। যাঁর রমজানের ইবাদত সফল হবে, কবুল হবে; তিনি রমজানের শেষে ফরজ তরক করা, সুন্নাত বর্জন করা এবং গর্হিত অন্যায় গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে অবশ্যই হেফাজত থাকবেন। 

রমজান হলো নাফসে আম্মারাকে স্থায়ীভাবে নাফসে মুৎমাইন্নায় উন্নীত করার জন্য সিয়াম সাধনা। রমজান-পরবর্তী সময়ে যদি নাফস আম্মারা পুনরায় প্রবল হয়ে ষড়্‌রিপুর দাসত্বে নিজেকে নিমজ্জিত করে, তবে সিয়াম সাধনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যায়, যা কখনো কাম্য হতে পারে না। 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক 

smusmangonee@gmail.com