Thank you for trying Sticky AMP!!

সালাম ইসলামের সর্বোত্তম অভিবাদন

সালাম আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, শুভকামনা। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দনজ্ঞাপক, উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামি অভিবাদন। ‘সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে অন্যতম। (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ২৪)। আল্লাহ তাআলা প্রথমে আদি মানব হজরত আদম (আ.)–কে সালাম শিক্ষা দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করে বলেন, যাও ফেরেশতাদের সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয়, মন দিয়ে শোনো। এটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম। সে অনুযায়ী হজরত আদম (আ.) গিয়ে ফেরেশতাদের বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’, অর্থ ‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ ফেরেশতারা উত্তরে বলেন, ‘আসলামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’, অর্থ ‘আপনার ওপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।’ (মিশকাত: ৪৬২৮)।

অন্যের গৃহে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না করো এবং গৃহবাসীদের সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ (সুরা-২৪ নূর, আয়াত: ২৭)।

বিশেষ পরিস্থিতিতে সালাম দেওয়া মাকরুহ এবং জবাব দেওয়া জরুরি নয়। যেমন: নামাজরত ব্যক্তি, কোরআন শরিফ তিলাওয়াতকারী, জিকিরকারী, হাদিস পাঠদানকারী, খুতবাদানকারী এবং শ্রবণকারী, ফিকহ নিয়ে আলোচনাকারী, বিচারকাজে ব্যস্ত বিচারক, আজানরত মুয়াজ্জিন, ইকামত দানকারী যখন ইকামত দেন, পাঠদানে ব্যস্ত শিক্ষক, বিবস্ত্র লোক ও প্রাকৃতিক কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬)।

সালাম এভাবে দেওয়া মুস্তাহাব, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’। উত্তরদাতা বলবেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।’ সালাম ও জবাবে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবে, যদিও উপস্থিত ব্যক্তি একজন হন। যতবার দেখা হবে, ততবার সালাম দিতে হবে।’ (আবুদাউদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা তোমাদের কোনো ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করো, তাকে সালাম দাও; যদি তোমাদের উভয়ের মধ্যে কোনো গাছ কিংবা পাথর বা দেয়াল আড়াল করে তারপর আবার দেখা হয় তাহলে আবারও সালাম দাও।’ হজরত আবু উমামাহ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম ব্যক্তি সে, যে মানুষকে আগে সালাম দেয়।’ (আবুদাউদ)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কোনো মজলিশে পৌঁছাবে তখন তুমি সালাম দেবে। আর যখন তুমি মজলিশ থেকে উঠে দাঁড়াবে, তখনো সালাম দেবে। প্রথম সালাম শেষের সালাম থেকে অধিক গুরুত্ব বহন করে না।’ (আবুদাউদ ও তিরমিজি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ছোটরা যেন বড়দের সালাম দেয়, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি যেন বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেয় এবং কমসংখ্যক লোক যেন বেশিসংখ্যক লোককে সালাম দেয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

চিঠি বা যেকোনো মাধ্যমে সালাম দিলেও তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। দূতের মাধ্যমে সালাম পাঠালে মুস্তাহাব হলো দূতকেও সালাম দেওয়া এবং এভাবে বলা, ‘ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।’ হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছেন।’ এ কথা শুনে রাসুলে আকরাম (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর এবং তোমার পিতার ওপর সালাম।’ বধির ব্যক্তিদের সালাম দেওয়ার সময় মুখে বলার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ইশারা করতে হবে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com