Thank you for trying Sticky AMP!!

হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যা করতে হবে

এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাবেন। ফাইল ছবি

আগামী ১৪ জুলাই হজ ফ্লাইট শুরু হবে। হজের ফ্লাইট চালুর সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষের হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ও প্রতারণার সংবাদ পাওয়া যায়। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়। তবে সরকার এবার প্রশিক্ষণসহ হজ ক্যালেন্ডার চালু করেছে। এটা সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাবেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় আর বাকি ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী ৫২৮টি এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করতে যাবেন। বেশ কয়েকবার হজ করার সুবাদে দেখেছি, হজযাত্রীরা সচেতন থাকলে সমস্যা থাকে না। কয়েকটি বিষয়ে নজর দিলে হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও ভালো করা সম্ভব:

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য

হজযাত্রীরা হজে যাওয়ার জন্য সরাসরি এজেন্সির কাছে না গিয়ে শহর বা গ্রামের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, ধর্মীয় শিক্ষক অথবা আগে যিনি হজ করেছেন এমন লোকের কাছে যান। তাঁরা এভাবে হজযাত্রী জোগাড় করে এজেন্সিগুলোর সঙ্গে দেনদরবার বা দরদাম করেন। এতে হজযাত্রীর এবং এজেন্সির মধ্যে এসব মধ্যস্বত্বভোগীর করা প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিতর্ক হয়। হজযাত্রী সচেতন হয়ে সরাসরি এজেন্সির সঙ্গে লেনদেন করলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে যাবে। এ জন্য ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় শহর-গ্রামের প্রতিটি মসজিদে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক প্রচারণার উদ্যোগ নিতে পারে।

সেবা সহজ ও অধিকার নিশ্চিত করা

২০১৬ সালে ই-হজ রেজিস্ট্রেশনে জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভান্ডার সংযুক্তির ফলে ভুয়া নামে নিবন্ধন বন্ধ হলেও পাসপোর্টের তথ্যভান্ডার যুক্ত না থাকায় অনেক হজযাত্রীর ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়। তা ছাড়া আমাদের দেশের একজন হজযাত্রী তাঁর অধিকার অর্থাৎ সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে কী কী সুবিধা পাবেন তা তিনি জানেন না, প্রতারিত হলে কী করবেন বা হজযাত্রীর অভিযোগ আদৌ প্রতিকার করা হয় কি না তা বেশির ভাগ হজযাত্রী জানেন না। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি অনেকটা দুর্বল।

বিমান ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব কার

সৌদি আরবে জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশনের (জিএসিএ) বিধিবিধান অনুযায়ী হজ ফ্লাইটসহ যাবতীয় ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে সব ফ্লাইটের অনুমোদন, তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। হজ ফ্লাইট নিয়ে তাদের ভূমিকা কী তা সবাই জানতে পারেন না। হজ ফ্লাইট বিপর্যয় হলে যাত্রীরা হজ পরিচালকের শরণাপন্ন হন, অথচ এয়ারলাইনসের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ তাঁর নেই। অথচ, হজযাত্রীদের শিডিউল ফ্লাইট বা ডেডিকেটেড ফ্লাইট অনুমোদন দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইট শিডিউলসহ বিভিন্ন বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইনস বিশেষ সুবিধা পায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এয়ারলাইনসের সেবার মান নিয়ন্ত্রণে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ? এ বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

থার্ড ক্যারিয়ার

কারও কারও ধারণা, থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করে দিলেই পরিবহন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু জিএসিএর বিধি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বাংলাদেশ বিমান ও বাকি অর্ধেক সৌদি এয়ারলাইনস বহন করবে এবং যদি তারা হজযাত্রী পরিবহন না করে, সে ক্ষেত্রে থার্ড ক্যারিয়ারের অনুমোদন দেওয়া হবে। থার্ড ক্যারিয়ার থাকলে এজেন্সির হাজিপ্রতি অতিরিক্ত ৩০-৪০ হাজার টাকা অধিক সাশ্রয় হলেও তা আদৌ কি হাজিরা পাবেন? ফলে থার্ড ক্যারিয়ার চালু হলে কার লাভ হবে? ২০১১ সালে থার্ড ক্যারিয়ার দেওয়া হলেও তখন হজযাত্রীদের যাত্রার অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি।

বিমানের ভাড়া বিমানই ঠিক করে

প্রতিবছর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকেই হজ প্যাকেজের জন্য বিমান ভাড়া ঠিক করতে বলে। কিন্তু ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত হয় না। কোনো রকমের খরচ বিশ্লেষণ ছাড়াই বিমানের মর্জিমাফিক প্রস্তাবিত বিমানভাড়া বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসকে দেওয়া হয়। এমনকি, শিডিউল ফ্লাইটের হজযাত্রীদের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া নেওয়া হয়, যদিও একই ফ্লাইটে অনেক কম ভাড়ায় সাধারণ যাত্রীরা গমন করছেন। এ ক্ষেত্রে সৌদি এয়ারলাইনসের লাভ অসম্ভব। কারণ, তারা শিডিউল ফ্লাইট দিয়ে প্রচুর হজযাত্রী পরিবহন করে। সৌদি আরবের চুক্তি মেনেই হজযাত্রী পরিবহনে ভারত কীভাবে খরচ কমাতে পেরেছে, তা নিয়ে আলোচনা খুব একটা দেখা যায় না।

মদিনার বাড়িভাড়া ও বিমানের ফ্লাইট নির্ধারণ

২০১৬ সাল থেকে সৌদি ই-হজ সিস্টেমে মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া অনলাইনে পরিশোধ করে ভিসা-প্রক্রিয়া করতে হয়। বাড়ি ভাড়া করার তারিখ অনুযায়ী বিমানের টিকিট বুকিং করতে হয়। তারিখের চাহিদা মোতাবেক বিমান বুকিং এবং মদিনার বাড়ি ভাড়ার তারিখ মিলে গেলে তো কোনো সমস্যা নেই। যদি উভয় তারিখের মধ্যে গরমিল হয়, তবে বিপত্তি ঘটে। তখন বেশি টাকা দিয়ে অন্য পন্থায় ম্যানেজ করা হয়। আর ম্যানেজ না করতে পারলেই হয় বিপর্যয়। সাধারণত হজ প্যাকেজে মদিনার বাড়িভাড়া হয় এভাবে—হজের আগে এক মাস। হজের এক সপ্তাহ বাদ থাকে। হজের পরে এক মাস। ধরা যাক, ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন। হোটেলে রুম বুক করার তারিখ অনুযায়ী প্লেনের টিকিট না পাওয়ায় যেতে পারলেন না। তখন আপনার আর্থিক ক্ষতি হয়। বিমানের তারিখ বুকিং করে হোটেল বুকিং করলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

মোয়াল্লেম ফি

৫০০ রিয়ালের মোয়াল্লেমের কোটা শেষ হলে বলা হয় তাঁদের ফি বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ হজযাত্রীকে অতিরিক্ত মোয়াল্লেমের খরচ দিতে হবে। অথচ হজ প্যাকেজে ১ হাজার ৩০০ রিয়াল ধরা আছে। কম দামের মোয়াল্লেমের অধীনে হলে এজেন্সির মুনাফা বেশি হয়।

ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয়

ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয়ে শুধু বাংলাদেশ বিমানের হজ ফ্লাইটের যাত্রীর ইমিগ্রেশনের কাজ হয়। কারণ, সেখানে সৌদি এয়ারলাইনসের কোনো কাউন্টার নেই। তাদের ৬৩ হাজার হজযাত্রী মূল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন হয়ে সৌদি আরব যান। হজ কার্যালয়ের বিদ্যমান অবকাঠামো প্রশস্ত করলে তা ১ লাখ ২৭ হাজার হজযাত্রীর জন্য সহায়ক হবে।

হজযাত্রী প্রতারিত হলে

কোনো হজযাত্রী প্রতারিত হলে আশকোনা হজ কার্যালয়, মক্কা, মদিনা, জেদ্দার হজ কার্যালয়সহ হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কাছে হজযাত্রী লিখিত অভিযোগ জানাবেন। কর্তৃপক্ষ সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। চাইলে হজের ওয়েবসাইট www.hajj.gov.bd ফরম ১৬ ক, খ দেখতে পারেন।

ফেরদৌস ফয়সাল: সাংবাদিক

afef78@gmail.com