Thank you for trying Sticky AMP!!

আজ বিজয়া দশমী, শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব

দুর্গাপ্রতিমা

শারদীয় দুর্গাপূজার আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদ উৎসবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও একটি বছর। আজ মঙ্গলবার বিসর্জনের দিন সকালে হবে দশমীর বিহিত পূজা। পূজা শেষে দর্পণ ও বিসর্জন। শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন।

গতকাল সোমবার মহানবমীতে মন্দির, মণ্ডপে যেন মিলেমিশে গেছে আনন্দ-বেদনা। দেবীর বন্দনায় ছিল ভিন্ন এক আবহ। পূজার উদ্‌যাপন আর দেবীকে বিদায়ের সুর বেজেছে ভক্তের হৃদয়ে। সকালে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় নবমীর আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন। ভক্তদের হৃদয়ে মগ্নতা আনতেই যেন এল দুপুরের হঠাৎ বৃষ্টি। রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে বিকেলের আগপর্যন্ত নবমীর উৎসব ছিল শান্তলয়ের।

ঢাকার কাছাকাছি বিভিন্ন শহর থেকে এসেছিলেন অনেকে। তাঁরা রাজধানীর প্রতিমা দেখতে এসেছেন। বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপে প্রতিমার কাছে বসেছিলেন চট্টগ্রামের সুভাষ চক্রবর্তী। লাল রঙের প্রাধান্য দিয়ে সাজানো দেবীকে সাক্ষী রেখে ভক্তদের হাতে চরণামৃত দিচ্ছিলেন তিনি। কারও কপালে দিলেন যজ্ঞের কালির ফোঁটা। জানালেন, মন্দিরের পুরোহিতের আত্মীয় তিনি। বৃষ্টির পানিতে জগন্নাথ হলের পুকুরটা ভরে উঠেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে যেমন চলছিল দলেবলে ছবি তোলা, আবার কেউ কেউ একা বসেছিলেন ঘাটের লাল সিঁড়িতে।

কাছেই রমনা কালীমন্দিরের প্রবেশপথের দুই পাশ থেকে শুরু হয়েছে আলোকসজ্জা। বড় নিম আর মেঘশিরীষগাছেদের গায়েও লেগেছে রঙিন বাতি।

ফুচকা, চটপটি, গোলগাপ্পার দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ধূপকাঠি, সিঁদুর, আলতার দোকানগুলো।

প্রবেশপথে দেখা গেল বড় গেটটার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক প্রবীণ। মোটা কাচের চশমা চোখে ফোকলা মুখে হাসি দিচ্ছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসা শুকলাল মণ্ডল। নাতনি মিতু সরকার তাঁর ছবি তুলে দিচ্ছেন। শুকলাল মণ্ডল নিজের বয়স ৭০ বললেও, মিতু বললেন ঠাকুরদার বয়স আরও বেশি। মনঃক্ষুণ্ন হয়েই যেন গটগট করে মণ্ডপের দিকে হাঁটা শুরু করলেন শুকলাল। তাঁর সঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল, ভেতরের মাইকের রবীন্দ্রসংগীত বাইরে আসছে না। এ মন্দিরে প্রতিমার পেছনের আবহে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে সবুজ রং। সন্ধ্যার মুখে শুরু হলো এখানে ঢাকের বাদ্য। বাগেরহাটের মোল্লাহাট থেকে এখানে এসেছেন এক দল ঢাকবাদক। তাঁদের মধ্যে আছেন সানাই এবং বাঁশিবাদকও। তারক বিশ্বাস সানাইয়ের সুর তুলছিলেন প্রতিমার সামনে বসে। তখন সারি সারি মানুষ ভক্তিভরে দর্শন করছেন দেবীর। ফার্মগেট থেকে আসা দীপাঞ্জলি পোদ্দার আর ওয়ারীর তুষার কান্তির মতো অনেক ভক্ত তখন প্রণাম করছেন দেবীকে।

রমনা কালীমন্দিরের দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন এক বছর পর হয় বলে জানালেন পুরোহিত মধুসূদন চক্রবর্তী। তিনি বললেন, দয়াগঞ্জের শিবগঞ্জ, ঢাকেশ্বরী এবং রমনা কালীমন্দিরের প্রতিমার বিসর্জন দশমীতে হয় না। এক বছর পর হয়। বিজয়া দশমীতে হয় ঘট বিসর্জন। সাতটি করে ঘট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে দেবী দুর্গার জন্য স্থাপিত প্রধান ঘটটি ছাড়া বাকি ছয়টির বিসর্জন হবে দশমীতে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মণ্ডপটি এবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে নান্দনিক সজ্জার জন্য। বাদামি রঙের প্রাধান্য দিয়ে ছিমছামভাবে সাজানো হয়েছে। বৃষ্টির জন্য বিকেল পর্যন্ত মানুষ কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে এ মণ্ডপে এসেছেন অনেকে।

বৃষ্টিবাদলা মাথায় নিয়েও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যথেষ্ট ভিড় ছিল গতকাল সারা দিনই। ভক্তরা বললেন, মাকে বিদায় জানাতে হবে বলে বেদনা আছে। একই রকম ভিড় ছিল রামকৃষ্ণ মিশনেও। রাত ১০টার দিকে নামে ভক্ত–দর্শনার্থীর ঢল। মিশনের স্বামী শান্তিকরানন্দ মহারাজ প্রথম আলোকে জানালেন, ভিড় আছে, উৎসব আছে, তবু দেবীকে বিদায়ের রাগিণী বেজে উঠেছে ভক্তদের মনে।

এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে মণ্ডপ হয়েছে প্রায় ২৫০টি। আজ বিজয়া দশমীতে সকালে দর্পণ বিসর্জনের পর থেকে শুরু হবে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। রাজধানীর অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গায়।