Thank you for trying Sticky AMP!!

রমজান ও বরকতময় সাহরি

সিয়াম সাধনার মাস

রোজা বা সিয়াম পালন করার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে পানাহার করাকে সাহরি বলা হয়। রোজা রাখার জন্য শেষ রাতে সাহরি খাওয়া সুন্নত। ইসলামের দৃষ্টিতে তা সুন্নত হলেও প্রকৃত তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য এর গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। কারণ, সহিহ্ বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; নিশ্চয় সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত নিহিত আছে।’ হজরত আমর ইব্নুল আস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমাদের (মুসলমানদের) রোজা আর আহলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিষ্টান)-এর রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া আর না-খাওয়া।’


সাহরির সময় ও পরিমাণ


সুবহে সাদিকের আগের সময়টাকে সাহরি বলা হয়। মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে মোল্লা আলী কারি (র.) বলেন, ‘অর্ধরাত্রি থেকে সাহরির সময় শুরু হয়।’ প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা জামাখ্শারি (রা.) এবং ফকিহ আবুল লাইছ সমরকন্দি (রা.) বলেন, সাহরির সময় হলো রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশ। সাহরি বিলম্বে খাওয়া সুন্নত। তবে সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না। তার আগেই নিরাপদ সময়সীমার মধ্যে পানাহার করলে নবীজির সুন্নত আদায় হয় এবং রোজা রাখাও সহজ হয়। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; যদি তা এক ঢোঁক পানিও হয়।’ অন্যত্র বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; যদি এক লোকমা খাদ্যও হয়।’ উপরিউক্ত হাদিস দ্বারা সাহরির গুরুত্ব বোঝা যায়। এক ঢোঁক পানি, এক লোকমা খাদ্য, এক কাপ দুধ, সামান্য ফলমূল বা একটি খেজুরের মতো যত্সামান্য হলেও সাহরি গ্রহণ করা বরকতময় সুন্নত। এই বরকত ইহকাল ও পরকাল উভয়ের জন্যই।

এ ছাড়া সাহরি খাওয়া সমস্ত দিন রোজা রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক, সাহরির সময় জেগে ওঠা রোজার প্রতি আগ্রহের যথেষ্ট প্রমাণও বটে। সাহরির সময় আরামের নিদ্রা বর্জন করে জেগে ওঠা প্রকৃতপক্ষে এক প্রকারের ইবাদত। এতে শেষ রাতে জেগে ওঠার অভ্যাস তৈরি হয় এবং তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নসিব খুলে যায়। সাহরির সময় জেগে ওঠা এক প্রকারের মুজাহাদা বা সাধনাও বটে। এই সময় আল্লাহর রহমত নাজিলের সময়, আল্লাহপ্রেমীদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাপেক্ষা উত্তম সময়। যাঁরা এই বরকতের সময় জেগে উঠে আল্লাহর মহান দরবারে মোনাজাত করেন এবং ইস্তিগফার করেন, আল্লাহ তাঁদের স্বীয় ভালোবাসা ও নৈকট্য দানে ধন্য করেন।

সাহরি খাওয়ার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য

সাহরির মাসআলা

কোনো কারণে সাহরি খাওয়া সম্ভব না হলেও রোজা রাখতে হবে, কোনো প্রকার বাহানা বা ওজর রোজা ছাড়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে সাহরি বর্জন করা সুন্নতের বরখেলাপ। কারণ, সাহরি খাওয়া সুন্নত। তা ছাড়া নবীজি (সা.) বলেছেন, সাহরি ছাড়া রোজা রাখা ইহুদি-নাসারাদের ধর্ম। তাই সাহরি গ্রহণ করে ইসলামি রোজার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করা ইমানদারদের কর্তব্য।

সেহরি নয়, সাহরি


সাহরি শব্দটি আরবি সাহর থেকে উদ্ভূত। সাহর শব্দের অর্থ হলো রাতের শেষাংশ বা ভোররাত। আর সাহরি অর্থ হলো শেষ রাতের খাবার বা ভোরের খাবার। মুসলমানেরা রোজা পালনের উদ্দেশ্যে শেষ রাতে ফজরের সময়ের আগে যে আহার করে থাকেন, তাকে সাহরি বলা হয়। সেহরি শব্দটি সেহর থেকে এসেছে; যার অর্থ হলো জাদু বা ম্যাজিক; অতএব সেহরি অর্থ হলো জাদুসংক্রান্ত বিষয় বা যাতে জাদুমন্ত্র আছে অথবা যার সঙ্গে জাদুবিদ্যার সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং সেহরি খাওয়া মানে হলো জাদুর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কিছু খাওয়া। (লিসানুল আরব)।

রহমত-বরকতময় মাহে রমজান

রমজানের মাসআলা: ফরজ গোসলনা করে সাহরি খাওয়া


রমজান মাসে রোজা পালনের উদ্দেশ্যে সাহরি খাওয়া সুন্নত। যদি কেউ এমন অবস্থায় পতিত হন যে ফরজ গোসল করে সাহরি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই; তখন অজু করে বা হাত-মুখ ধুয়ে আগে সাহরি খেয়ে নেবেন। পরে গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করবেন। কারণ, সাহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়, বরং সুন্নত; আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ। গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা করে নিতে হবে, বিনা ওজরে বেশি সময় অপবিত্র অবস্থায় থাকা সমীচীন নয়। এতে রহমতের ফেরেশতাদের কষ্ট হয়; তাই দ্রুত পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। (আল কুদুরি; ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)


মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com