Thank you for trying Sticky AMP!!

মদ্যপান যেভাবে হারাম করা হয়েছিল

আমরা জানি, ইসলামে মদ বা নেশাজাতীয় কিছু গ্রহণ করা হারাম। এতে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। তবে অনেকের হয়তো এ বিষয়ে জানা নেই যে ইসলামে মদকে একবারে হারাম করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা ধাপে ধাপে মদ হারাম করেছিলেন।

ইসলাম-পূর্ব যুগে সাহাবিদের অনেকে মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিলেন। বিশেষ করে নাবিস নামের একপ্রকার পানীয় ছিল, যা খেজুর ও দুধ দিয়ে তৈরি করা হতো। বেশি দিন এটা রেখে দিলে তাতে মাদকতা চলে আসত। ইসলাম গ্রহণের আগে হজরত উমর (রা.) মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, এখন থেকে তাঁর আগের খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করবেন। হজরত উমর (রা.) মনে মনে চাচ্ছিলেন, মদ হারাম ঘোষণা করা হোক। তিনি অনুধাবন করেছিলেন, এটি খারাপ কাজ। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য তিনি বারবার মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রশ্ন করতেন।

Also Read: জানাজার নামাজের ফজিলত

হঠাৎ একদিন আয়াত নাজিল হলো, ‘লোকেরা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, দুয়ের মধ্যে মহাদোষ, মানুষের জন্য উপকারও আছে; কিন্তু উপকারের চেয়ে ওদের দোষই বেশি। লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলো, যা উদ্বৃত্ত। এভাবে আল্লাহ তাঁর সব নিদর্শন তোমাদের জন্য প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করো ইহকাল ও পরকাল সম্বন্ধে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৯)

এ আয়াতে মদ্যপানকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবে সরাসরি হারাম করা হয়নি। উমর (রা.) বুঝতে পারলেন তাঁর দোয়া কবুল হয়েছে। তিনি সঠিক পথে আছেন। এবার তিনি বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলেন, যেন আল্লাহ স্পষ্টভাবে মদের ব্যাপারে কিছু বলে দেন।

এদিকে একদল সাহাবি মদ্যপান করে নামাজ আদায় করছিলেন। ফলে যা হওয়ার তা-ই হলো। নামাজরত অবস্থায় তাঁরা এক আয়াতের জায়গায় আরেক আয়াত পাঠ করে ফেলেন। আবারও আয়াত নাজিল হলো, ‘হে তোমরা যারা ইমান এনেছ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের ধারেকাছেও যেয়ো না, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যে কী বলছ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৩)

Also Read: যেভাবে সালাম এল

এ আয়াতের মাধ্যমে নামাজ পড়ার আগে মদ্যপানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবার সাহাবিরা বুঝতে পারলেন, তাঁদের মদ্যপানের বিষয়টি আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করছেন। এ আয়াত নাজিলের পর অনেক সাহাবি মদ্যপান ছেড়ে দিতে লাগলেন।

হজরত উমর (রা.) এবার আরও বেশি নিশ্চিত যে মদ্যপান হারাম হতে যাচ্ছে। তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, যেন মদ্যপান হারাম ঘোষণা করা হয়। শেষ পর্যন্ত সুরা মায়েদার ৯১তম আয়াত নাজিল হলো, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা ও ভাগ্যনির্ধারক তির, এ সবকিছু গর্হিত ও শয়তানের কাজ। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’

এ আয়াত শুনে হজরত উমর (রা.) চিৎকার দিয়ে উঠলেন। তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমরা পরিত্যাগ করলাম, আমরা পরিত্যাগ করলাম।’ এর পর থেকে মদ্যপান হারাম হয়ে গেল।

Also Read: দোয়া ইউনুস যেভাবে এল

কিছু সাহাবি এ আয়াত নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাঁরা মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, যারা এত দিন মদ খেয়েছে এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের কী হবে? মহানবী কোনো উত্তর দিলেন না, তিনি আল্লাহর উত্তরের অপেক্ষায় থাকলেন। এরপর আবারও আয়াত নাজিল হলো, ‘যারা ইমান আনে ও ভালো কাজ করে, তাদের ওপর কোনো পাপ নেই, যা তারা আগে আহার করেছে, যখন তারা ভবিষ্যতে তা পরিত্যাগ করে, ইমান রাখে ও ভালো কাজ করে; আবার সংযত থাকে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে। আবার সংযত থাকে ও ভালো কাজ করতে থাকে। আল্লাহ এরূপ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৯৩)

এ আয়াতের অর্থ, আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী সাহাবিদের মাফ করে দিয়েছেন। এ ঘটনার পর হজরত উমর (রা.) সবাইকে বোঝাতে লাগলেন, আর কোনো কথা নেই। আজ থেকে আমরা কেউ মদ্যপান করব না। এরপর সাহাবিরা সবাই মিলে মদের পাত্র ও শরাবখানাগুলো ভেঙে দিতে লাগলেন। মদ হারাম হয়ে গেল।

এ ঘটনা থেকে বেশ কিছু বিষয় শেখার আছে। প্রথমত, আল্লাহ তাআলা মদ্যপানের মতো একটি ঘৃণিত কাজ একবারে হারাম করেননি। করলে হয়তো অনেকের জন্য এটি পরিত্যাগ করা কষ্টকর হতো। পণ্ডিতদের অভিমত, আল্লাহ তাআলা মদ ধীরে ধীরে হারাম করেছিলেন, যাতে সাহাবিরা তাঁদের অভ্যাসগুলো নিজে থেকে পরিত্যাগ করেন। আর হয়েছিলও তা-ই।

এখানে হজরত উমর (রা.)-এর ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। অন্য ব্যক্তিরা যেখানে সন্দেহ পোষণ করছিলেন, সেখানে তিনি সহজে বুঝতে পেরেছিলেন কাজটি ঠিক হচ্ছে না। নারীদের পর্দা করার ব্যাপারেও তাঁর অভিমত ঠিক দিকে ছিল। বস্তুত এসব কারণে তাঁর উপাধি হয়েছিল ‘ফারুখ’, যার অর্থ সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

Also Read: রাতে ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়ার কারণ