Thank you for trying Sticky AMP!!

আন্তসংযোগে সবার স্বার্থ দেখতে হবে

মোবাইলে আর্থিক সেবায় আন্তসংযোগ চালু হলে লেনদেনও বাড়বে। ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে এমন অভিমত।

আহসান এইচ মনসুর, দেব দুলাল রায়,তহুরুল হাসান ও তানিয়া হক।

মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) আন্তসংযোগ চালু হলে ডিজিটাল লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে এই সেবা চালুর আগে সবার স্বার্থ সমানভাবে দেখতে হবে। আবার গ্রাহকদের ওপর নতুন করে মাশুলের বোঝা চাপানো ঠিক হবে না। গ্রাহকদের স্বার্থ ও অর্থের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে সবার আগে।

প্রথম আলো ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ডিজিটাল ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আন্তসংযোগের সুযোগ ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ আলোচনা গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুবাই এয়ারপোর্টে বিভিন্ন দেশ থেকে উড়োজাহাজ গিয়ে নামে। আবার অন্য গন্তব্যে চলে যায়। দুবাই এয়ারপোর্ট আন্তসংযোগ সুবিধা দেয়। ঠিক একইভাবে এমএফএসে আন্তসংযোগ সেবা চালু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ, কারিগরি একীভূতকরণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আবার এই সেবার ব্যবসায় মডেল কী হবে, তা-ও দেখতে হবে। তা না হলে এ সেবা চলবে না। সবার স্বার্থ সমানভাবে দেখতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, এমএফএসে আন্তসংযোগ চালু হলে অর্থনীতি উপকৃত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটা কীভাবে কাজ করবে। লেনদেন সমন্বয় কীভাবে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে। সব ব্যাংক ও এমএফএস যাতে এই সেবায় আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান কী সেবা দেবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যাবে না। ব্যবসায় উদ্ভাবনের সুযোগ রাখতে হবে। আর মাশুল নির্দিষ্ট করে দেওয়া ঠিক হবে না। গ্রাহকদের সেবা বাছাইয়ের সুযোগ দিতে হবে। কোন ধরনের সরকারি উদ্যোগ ছাড়াই ইতিমধ্যে এই সেবায় অনেক উন্নয়ন হয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (প্রোগ্রামিং) দেব দুলাল রায় বলেন, আন্তসংযোগ ব্যবস্থায় দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হয়। তা না হলে এ সেবার যথাযথ ব্যবহার হয় না। এই সেবার পরিধি যত বাড়ে, লেনদেনও তত বাড়ে। এতে অর্থনীতি উপকৃত হয়। এই সেবার মাশুল কত হবে, তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে টিকে থাকে, গ্রাহকদের ওপর যাতে চাপ তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি। গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই সেবা চালু হবে না।

সরকারের এটুআইয়ের ডিজিটাল অর্থনৈতিক সেবা বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার তহুরুল হাসান বলেন, ১০ বছর ধরে ডিজিটাল আর্থিক বাজার ধীরে ধীরে আজকের অবস্থানে এসেছে। আন্তসংযোগের ফলে এমএফএসগুলো নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে কেন এনপিএসবিতে যাবে, এটাও দেখতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় এর খরচ কেমন হবে, কে খরচ বহন করবে—এসব দেখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, আর্থিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই নাজুক। এ ক্ষেত্রে এমএফএস বড় সুযোগ। এ জন্য নারীদের আর্থিক ও প্রযুক্তিশিক্ষা দিতে হবে।

ডিজিটাল টিকিট ও রাইড শেয়ারিং সেবা সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির বলেন, আর্থিক সেবায় আন্তসংযোগ চালু হলে ডিজিটাল লেনদেন বাড়বে। এর ফলে সেবাদাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, সেবার মানও বাড়বে। তবে সেবার মাশুল যেন কারও জন্য বোঝা না হয়, সেটা দেখতে হবে।

এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, মোবাইলে অর্থ লেনদেন ব্যবস্থায় আন্তসংযোগ চালু হলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসবে। আন্তসংযোগ চালু হলে এই সেবা আরও বাড়বে। সমস্যা হলো ৬০টি ব্যাংক ৬০ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আবার এমএফএসগুলোর প্রযুক্তিও পৃথক। ফলে সমন্বয় কীভাবে হবে, এটা জরুরি। কারণ, গ্রাহকদের স্বার্থ সবার আগে। তিনি আরও বলেন, ‘আন্তসংযোগ চালু করলে প্রকৃতভাবে করতে হবে। এই সেবায় প্রথমেই মাশুল না দিয়ে বিনা মূল্যে দিয়ে বাজার ধরা যেতে পারে। মাশুল চাপিয়ে প্রথমই এ সেবার কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে গ্রাহকদের যে পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) আছে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া দেওয়া যেতে পারে।’

রকেট সেবাদাতা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবেদুর রহমান সিকদার বলেন, আন্তসংযোগ সেবা চালুর আগে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি, সচেতনতা ও সহজে ব্যবহারযোগ্যতা। আর এ সেবায় মাশুল কত কাটা হয়, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রান্তিক মানুষের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এ সেবায় অর্থ উত্তোলনে মাশুল অনেক বেশি। ১ হাজার টাকা উত্তোলনে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা প্রান্তিক মানুষের জন্য চাপ হয়ে যায়। সব এমএফএস মিলে এটা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদীর বলেন, ‘আন্তসংযোগ সেবা চালুর জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। এ সেবায় লেনদেনে সমন্বয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসব লেনদেন নিষ্পত্তি হবে, এটা স্বস্তির বিষয়। তবে এই সেবার মাধ্যমে যাতে অর্থ পাচার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এখন ৭১ শতাংশ লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে। এতে কোনো খরচও দিতে হচ্ছে না। ডিজিটাল লেনদেন যত বাড়বে, খরচের বিষয়টি তত গৌণ হয়ে যাবে।

উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমিরেটাস ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতর থেকে ব্যক্তি খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে এই সেবা পরিচালনা করতে না পারে। আবার তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে সেবা দিলে গ্রাহক সুরক্ষা কীভাবে হবে, এটাও দেখতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।