Thank you for trying Sticky AMP!!

১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘ভাষা হোক ভালোবাসার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচনা করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জান্নাতুল ফেরদৌস, বেসরকারি সংস্থা ডিনেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল হোসেন, লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট ইলিরা দেওয়ান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারম্যান শান্তা তাওহিদা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক এবং সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান প্রধান মুনির হাসান

পীড়নের নয়, ভাষা হোক ভালোবাসার

শারীরিক ও মানসিক গড়নকে ব্যঙ্গ করে শিশু-কিশোরদের ডাকার জন্য কিছু বিশেষ শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের আচরণ কেবল শিশু নয়, সবার বেলাতেই পরিত্যাজ্য। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জিপিএইচ ইস্পাত এ নিয়ে একটি প্রচরণা চালায়, যাতে সমাজে এ অপনামে ডাকা বন্ধ হয়। এর ধারাবাহিকতায় প্রথম আলোর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় একটি ওয়েবিনার।

১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘ভাষা হোক ভালোবাসার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, বেসরকারি সংস্থা ডিনেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারম্যান শান্তা তাওহিদা, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জান্নাতুল ফেরদৌস এবং লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট ইলিরা দেওয়ান। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান প্রধান মুনির হাসান।

মুনির হাসান: ভাষা হোক ভালোবাসার—জিপিএইচ ইস্পাত–প্রথম আলোর আজকের আলোচনার উদ্দেশ্য হলো কিছু ভাষা আছে, অথবা কিছু বাক্য অনেক সময় ব্যবহার করা হয়, যা একটি শিশু বা পূর্ণবয়স্ক মানুষকে হেয় করে। মানুষের মানসিক বা শারীরিক শক্তিকে ব্যঙ্গ করা হয়। শব্দগুলো অনেক সময় নামের সঙ্গে মিলিয়ে, অনেক সময় শারীরিক গড়নের সঙ্গে মিলিয়ে ডাকা হয়। যেমন একটু বেঁটে হলে বাইট্টা, মোটা হলে মোটকু, গায়ের রং শ্যামলা হলে কাইল্লা। কথা বলতে সমস্যা হলে তোতলা বলি, যা শিশুমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, যারা ছোটবেলায় এভাবে ভাষা দিয়ে অন্যকে পীড়ন করে, তারা স্কুল বা কলেজে গিয়ে আরও বড় আকারে বুলিং করে।

তারিক মনজুর: শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রত্যেকে যারা স্কুলে গিয়েছে বা যায়নি, সবাই এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। ভাষা হোক ভালোবাসার, এ কথার সঙ্গে আমরা বলতে চাই ভাষা হোক কাজের। কেউ মোটা হলে তাকে এক রকম নামে ডাকে, গায়ের রঙের জন্য আরেক নামে ডাকে, একই সঙ্গে নাম থেকেও কিন্তু অপনাম তৈরি করে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের এমন ক্ষমতা আছে, প্রত্যেকের নাম থেকে একটা ব্যঙ্গ নাম তৈরি করে। বুলিং থেকে র‌্যাগিং, উত্ত্যক্ত করার (টিজিং) মতো মানসিকতাও পরে তৈরি হতে পারে।

বাংলার শিক্ষক হিসেবে আমি বলব, এগুলো অপনাম। ধর্মীয়ভাবে অপনামের ব্যাপারে বলা আছে। পবিত্র কোরআন শরিফে আছে, ‘তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না।’ শিক্ষার্থীদের এ উপলব্ধি আমরা পাঠ্যপুস্তকেই রেখে দিই, কোনো প্রয়োগ নেই বাস্তব জীবনে। আমাদের কাজ হলো ক্লাসরুমে সবাইকে দুই পা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণ পরিচয় বইয়ের দুই ভাগেই আচরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সিরাজুল হোসেন: বুলিংকে হালকাভাবে দেখার কারণ নেই। বুলিং একটা অপরাধ। এটা শিশুরা করলেও হালকাভাবে দেখা যাবে না। শিশুদের আরও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ছয় মাস, এক বছর বয়সী শিশুকে কে কী নামে ডাকছে তাতে তার কিছু এসে যায় না, কারণ এটা বোঝার বয়স তার হয়নি। একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চাকে অপনামে ডাকলে তার মধ্যে এর প্রভাব পড়ে। শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনের বয়স ৬–৭ থেকে ১৪–১৫ বছর। এ বয়সে শিশু বুলিংয়ের শিকার হওয়ার ফলে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়, মানুষের সামনে কথা বলতে লজ্জা পায়, ব্যক্তিত্বহীন হয়ে যায়। অনেক সময় আত্মহত্যাও করে। বিষয়টা সর্বজনীন, সারা পৃথিবীতেই হচ্ছে।

বুলিং বিষয়টাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শিশু অপরাধপ্রবণতা থেকে বুলিং, তারা নিজেরাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কালচারাল বুলিং যা অন্যের দেখাদেখি করা হয়ে থাকে। অপনামে ডাকার (নেম কলিং) ফলে ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদা, আত্মনির্ভরশীলতার জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রভাব সারা জীবন বহন করে। সে নিজেকে নায়কসুলভ কিছু ভাবতে পারে না। সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িত এমন অনেকের জীবন ঘেঁটে দেখা গেছে, সে ছোটবেলায় বুলিংয়ের শিকার হয়েছিল।

জান্নাতুল ফেরদৌস: বুলিং বিষয়টা যে কতটা ভয়াবহ, তা শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাই। শুধু স্বেচ্ছায় নয়, প্রিয়জনেরা না বুঝেও অনেক সময় বুলিং করে থাকে এবং শিশুর আত্মবিশ্বাস শৈশবেই নষ্ট করে দেয়। একটা শিশুর কথা জানি, যে কখনো কোনো প্রাইভেট টিচারের কাছে পড়েনি, কোচিং করেনি কিন্তু সে সব সময় ক্লাসে প্রথম হয়। তার নিজের চেষ্টায় নিজের অধ্যবসায়ে। তার মা একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ায় তার সহপাঠী এমনকি শিক্ষকেরাও বলত, সে তার মায়ের কারণে প্রতিবছর ক্লাসে প্রথম হয়। ফলে সেই শিশু ক্লাসে প্রথম হতে, পড়ালেখা করতে, ভালো ফলাফল করতে ভয় পায়! আরেকটা ঘটনা—এক সপ্রতিভ শিশুকে আমরা লক্ষ করলাম সে আস্তে আস্তে অন্যদের থেকে দূরে থাকছে, একা থাকছে এবং একসময় পুরোপুরি স্কুলে আসা বন্ধ করে দিল। কারণ হিসেবে আমরা জানতে পারলাম, এই শিশুর পরিবারে আর যত শিশু আছে, তারা সবাই দেখতে ফরসা। গায়ের রং শ্যামলা হওয়ার কারণে সব সময় পরিবার থেকে কথা শুনতে হয়েছে। ফলে এই শিশুর মনে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়, যা তাকে প্রথমে স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং পুরোপুরি মানসিক রোগীতে পরিণত করেছে। মানুষ ভাষা দিয়েই মানুষের দুর্বল জায়গাগুলোতে আঘাত করার চেষ্টা করে। আমরা যদি ভাষাকে পরে একটু সংযতভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমরা শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে বড়দেরও মানসিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারি। শিক্ষকেরা শিশুদের মনোজগতের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকেন। সেই শিক্ষকদের থেকে শিশুরা বিরূপ মন্তব্য শুনলে নিজেকে অপদার্থ ভেবেই বড় হয়। তাই ভাষার ব্যবহারে আমাদের অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে।

ইলিরা দেওয়ান: শিশুদের ছোটবেলায় আদর করে যে অপনামে ডাকা হয়, এটা আসলে শিশুকে হেয় করে ডাকা হয়। এসব নামের কারণে বড় হয়ে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমাদের পাহাড়ি সমাজেও এটা আছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি আলাদা। পাহাড়ি জনপদ থেকে বেরিয়ে যখন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলাম, তখন ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। বাঙালির বাইরে যে দেশে আরও জাতি আছে, তাদের নিজস্ব ভাষা–সংস্কৃতি আছে, সে বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা দেওয়া হয় না। পাঠ্যক্রম বা কারিকুলাম তৈরির সময় নৃগোষ্ঠীর গৌরবময় ঐতিহ্য চাকমা বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, কার্পাস বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহের ইতিহাস তুলে ধরলে এ সমস্যা হতো না।

শান্তা তাওহিদা: আমরা চাই আমাদের কোনো শিশু ভিন্ন জাতিসত্তা থেকে এলে সেই ভাষার জন্য যেন কোনো পীড়নের শিকার না হয়। ভাষা যেন শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কের মানসিক নির্যাতনের কারণ না হয়। ভাষা যখন নির্যাতনের মাধ্যম হয়, পীড়নের কারণ হয়, তখন আমরা তাকে বুলিং বলি। শিশুরা শিশুদের বুলিং করলে আমরা যদি তাকে অপরাধীর আসনে বসাই, তাহলে ভুল করা হবে। কারণ, যে বুলিং করছে এবং যে এর শিকার, দুজনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

একটি শিশুর ভাষার বিকাশ হতে সময় লাগে শূন্য থেকে চার বছর। এ সময় শিশু তার চারপাশের পরিবেশ থেকে যে ভাষা ও শব্দের ইনপুট পায়, তা সে অনুকরণের মাধ্যমে শিখে থাকে। তাই যে শিশু বুলিং করছে, তার জন্য প্রথমেই তার পরিবার ও পরিবেশ দায়ী। পাশাপাশি শিশুর ভাষার ইতিবাচক, নেতিবাচক শিক্ষা দেওয়া আমাদের পরিবার এবং শিক্ষকের ওপর বর্তায়। তাই শিশুর সঙ্গে ভাষা ব্যবহারের সময় নেতিবাচক শব্দ পরিহার করতে হবে।

যে শিশু স্কুলে, বন্ধুদের বাসায় বুলিং করছে, তার ভাষা চিকিৎসা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিশুর থিওরি অব মাইন্ড বিকাশের সমস্যা থাকতে পারে, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার থাকতে পারে, সোশ্যাল (প্র্যাগমেটিক) কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার থাকতে পারে। কোন পরিবেশে কোন ভাষা ব্যবহার করা যাবে আর যাবে না, সেটা বুঝতে না পারাই সোশ্যাল (প্র্যাগমেটিক) কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার। তাই যারা বুলিং করছে এবং শিকার হচ্ছে, তাদের মানসিক ও ভাষিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে এবং যথাযথ থেরাপির মাধ্যমে ভাষিক সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

ভাষা শিশু নির্যাতনের মাধ্যম না হোক, সেই প্রত্যাশা করি।

আনিসুল হক: ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে আমরা শুধু বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা চাইনি, অন্যতম রাষ্ট্রভাষা চেয়েছি। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা নয়, প্রতিটি মাতৃভাষার দিবস। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে কিন্তু বলেছেন, ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলিম, বেঙ্গলি-নন বেঙ্গলি সকল ভাষা এবং জাতের মানুষ থাকতে হবে, যাতে আমাদের বদনাম না হয়, একটা দেশে একজনও যদি নৃগোষ্ঠীর, অন্য ভাষার, রঙের মানুষ থাকে, তার সঙ্গে আমি কী ব্যবহার করছি, তাকে স্বাধীনতা, মর্যাদা দিচ্ছি কি না, তা দেখে তারা কতটা সভ্য তা বোঝা যায়।

আমার দাঁত বড় থাকায় ছোটবেলায় আমাকে দাঁতুয়া বলা হতো। অনেক সময় অঞ্চল ধরে হেয় করে ডাকাকে স্মার্টনেস ভাবা হয়। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা প্রতিবাদ করে। গায়ের রং, মোটা বা শুকনা ধরে বললে বলে এভাবে এটা নিয়ে বলতে হয় না। সভ্যতার ন্যূনতম আচরণগুলো আমাদের কেউ শেখায়নি, কিন্তু এখন শেখাতে হবে। উন্নত দেশের স্কুলগুলোতে নানা বর্ণের, জাতের, নানা রকমের দেখতে ছেলেমেয়েরা একই সঙ্গে পড়াশোনা করে। রং, দেখতে কেমন এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয় না তা তারা জানে। আমরা জানি না, জানাতে পারতে হবে।

বুলিং নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। বুলিংয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। ট্রলিংয়ের মাধ্যমেও আমরা বুলিং করে থাকি। সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে আমরা সবকিছুর বিচার করতে পারব না। কিন্তু ভাষার মাধ্যমে আলো ছড়াতে চাই।

শান্তা তাওহিদা: বুলিংকে ভাষাপীড়ন বলা যায়। মাতৃভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। মায়ের ভাষা কখনো পীড়নের ভাষা হতে পারে না। মায়ের ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকতে হবে, শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মাতৃভাষায় আমরা সব সময় ভালোবাসার কথাই বলতে চাই।

তারিক মনজুর: বুলিংয়ের বাংলা হিসেবে ভাষাপীড়ন শব্দটা পরিভাষা হিসেবে আসতে পারে। ভাষা হচ্ছে যোগাযোগের মাধ্যম। শিশু জন্মের পর থেকে পরিবার-পরিবেশ থেকে অনুকরণ করে এ যোগাযোগ শেখে। শিশুর ক্ষেত্রে বুলিংয়ের বিষয়টা অপরাধমূলক হিসেবে কাজ না করে সমাধানমূলক হতে হবে। শিশুদের কোনো কিছু সমস্যা না দেখিয়ে সমাধান দেখানো দরকার।

জাতি এবং বর্ণগত পার্থক্য, দৈহিক কাঠামোগত বর্ণনা করতে আমরা পছন্দ করি। এমনকি পাঠ্যবইয়ে এটা এসেছে ঔপনিবেশিক চিন্তা থেকে। চুল কোঁকড়া, নাক চ্যাপটা, দেহ কালো—এগুলো পাঠ্যবইয়ে কোনো জাতিকে চেনাতে দরকার নেই। প্রতিটি জাতির একটা ঐতিহ্য আছে, তা জানাতে হবে। শিশুর ছোটবেলায় থাকা অপনাম পরে বুলিং, টিজিং, র‌্যাগিংয়ের পর্যায়ে চলে যায়।

সিরাজুল হোসেন: বুলিং থেকে শুধু প্রচারের মাধ্যমেই বের হওয়া যাবে তা নয়। উন্নত বিশ্ব এ নিয়ে কাজ করলেও বুলিং বাড়ছে। সমাজে অন্য মানুষকে গ্রহণ করা, অনুভব করার বিষয়টা নিয়ে চিন্তায় ফাঁক আছে। বুলিং আমাদের মস্তিষ্ককে চাপের মধ্যে রাখে। ছোটবেলা থেকে চিন্তায় একটা দিকে ধাবিত না হয়ে আমাকে পৃথিবীতে কী কাজে দরকার সেটা নিয়ে কাজ করলে ছোটবেলার ইগো বা অহংভিত্তিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। জাতীয় সীমাবদ্ধতাও এর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। বুলিং ঠেকাতে পরিবারকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু বাসা থেকে মানসিক চাপ নিয়ে এসে স্কুলেও যদি সহপাঠী এবং শিক্ষকের মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হয়, তাহলে তার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে।

আনিসুল হক: জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বুলিং নিয়ে কথা বলা শুরু হলো। বুলিং বন্ধে আবেদন জানানোর পাশাপাশি যা যা উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার, তার উদ্যোগ শুরু করে দিতে হবে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বুলিং নিয়ে কিছুটা কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব স্কুলে এ বিষয়টি এখনো যায়নি। বুলিংয়ের সমস্যাটা স্বীকার করে, চিহ্নিত করে সমাধনের চেষ্টা করতে হবে। ভাষার মাধ্যমে ভালোসা ছড়াব। ঘৃণা নয়, বিদ্বেষ নয়, পরস্পরকে কাছে টেনে নেব।

জান্নাতুল ফেরদৌস: বুলিং বিষয়টা এখনো অতটা পরিচিত নয়। ইংরেজি মাধ্যমের কিছু স্কুল এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কারণ, তাদের এক ছাত্রী বুলিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরাও সচেতন হতে শুরু করেছি। ভাষাপীড়নকে এখনো স্বাভাবিক হিসেবে নেওয়া হচ্ছে, তাই এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। নেতিবাচক দিকগুলো মানুষকে দেখাতে পারলে সচেতন হওয়া সহজ।

তারিক মনজুর: ভাষাপীড়ন বড়দের ক্ষেত্রে শাস্তির পর্যায়ে আনা যায় মানহানির মামলা দিয়ে, কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

সিরাজুল হোসেন : যে বুলিং করছে এবং শিকার হচ্ছে, দুজনের জন্যই কিন্তু চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। শাস্তি বলতে শিশুদের কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা বোঝানো হয়েছে।

শান্তা তাওহিদা: আমরা সামনাসামনি পীড়নের কথা বলছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কিন্তু বুলিং হয়। আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচুর নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার হয়। সেগুলো কোনো শিশু যখন দেখছে, তা তার মনোজগতে প্রভাব ফেলছে এবং সে অসচেতনভাবে একজন ভাষাপীড়নের ব্যক্তি হয়ে উঠছে।

ইলিরা দেওয়ান: বাংলাদেশে ভিন্ন জাতিসত্তা, ভাষা–সংস্কৃতির মানুষ আছে। তাই বাঙালি ছাড়াও অন্য জাতিসত্তার প্রতি আমরা যেন শ্রদ্ধাশীল থাকি। আঞ্চলিক ভাষার প্রতিও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। ভাষা আমাদের শিষ্টাচার প্রকাশের অংশ।

মুনির হাসান: আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।