Thank you for trying Sticky AMP!!

সামুদ্রিক মৎস্য শ্রমজীবীর জন্য চাই বিশেষ উদ্যোগ

মুজিবুল হক, আবদুস সাত্তার মণ্ডল, শাহীন আনাম, রেজাউল করিম চৌধুরী

সামুদ্রিক মাছের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এ খাতে মৎস্য শ্রমজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের নজরদারি বাড়াতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতের এই শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের জন্য নিতে হবে বিশেষ কর্মসূচি।

গতকাল সোমবার মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলোর আয়োজনে বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্যজীবীদের শ্রম খাতভিত্তিক প্রভাব মূল্যায়নবিষয়ক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এ কথা বলেছেন।

সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক অংশীদার দ্য ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস ‘সাসটেইনেবল ওশেনস প্রজেক্ট’ নামে বাংলাদেশ ও চিলিতে একটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করছে। এর মেয়াদ শেষ হবে চলতি মাসেই। বাংলাদেশে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে প্রকল্পটির আওতায় কক্সবাজারের মহেশখালী ও বরগুনার পাথরঘাটায় গবেষণা করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) ও কোস্ট ট্রাস্ট। গতকালের বৈঠকে এ গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলের ওপর আলোচকেরা সুপারিশ দেন।

বৈঠকের প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক অডিও বার্তায় বলেন, দেশের শ্রম আইনের বাইরে থাকা মৎস্য শ্রমজীবীদের মানবাধিকার রক্ষাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিন্তাভাবনা কম হয়েছে। তিনি আলোচকদের সুপারিশ সরকারের যথাযথ স্থানে এবং জাতীয় সংসদে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন।

ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, দুর্গম জায়গায় মৎস্যজীবীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন। পারিশ্রমিক নগণ্য। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষটি হারিয়ে গেলে বা মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পায় না পরিবার। তখন পরিবারের পুরো দায় এসে পড়ে নারী সদস্যের ওপর। আর এ খাতের নারী ও শিশু শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ।

বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী। সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

আলোচনায় বরগুনার পাথরঘাটার জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সমাজকল্যাণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, এই খাতের শ্রমিকদের সাগরে মানবেতর জীবন কাটাতে হয়। ১৮ থেকে ২২ ঘণ্টা কাজ করার পরও শ্রমিকদের ঘুম হয় না। খাওয়ার পানির অভাব, পাশাপাশি দীর্ঘদিন গোসল ছাড়া থাকতে হয়। নির্দিষ্ট মজুরি নেই। ট্রলারমালিকেরা লাইসেন্সের ১৩টি শর্ত মানেন না বলে শ্রমিকদের নিরাপত্তাও নেই। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় শ্রমিক পরিবারপ্রতি ৪০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তা ঠিক সময়ে শ্রমিকদের হাতে পৌঁছায় না।

মৎস্যশ্রমিকদের শ্রম পরিস্থিতি বিশ্লেষণবিষয়ক মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বিলসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং) রেজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন, জাহাজে জীবন বাঁচানোর সরঞ্জামের কমতি আছে। সমুদ্রে তাঁদের কাছে ঝড় বা সাইক্লোনের বিপৎসংকেত পৌঁছানোর মতো শক্তিশালী ও আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি আছে। এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের মতে, জীবনের তাগিদে ট্রলারমালিকদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়, এই ঋণ শ্রমের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। এ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ চান তাঁরা। ট্রেড ইউনিয়ন করার জটিলতার পাশাপাশি লিখিত চুক্তি ছাড়াই শ্রমিকদের কাজ করতে হয় বলে ক্ষতিপূরণ পাওয়াসহ অন্যান্য অধিকার আদায়ের বিষয়টিও জটিল হয়ে পড়ে।

আলোচনায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সাত্তার মণ্ডল বলেন, ১২ বছর আগেও এই শ্রমিকদের নিয়ে প্রায় একই কথা শুনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদনও পেয়েছে। কিন্তু এই শ্রমিকেরা উন্নয়নের বড় ধরনের কাঠামোতে সম্পৃক্ত হতে পারেননি। সমস্যাটা যেহেতু একই রয়ে গেছে, তার মানে সমস্যার সমাধানে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। আবদুস সাত্তার এই শ্রমজীবীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, পরিবারের তরুণ সদস্যদের জন্য কারিগরি ও দক্ষতামূলক শিক্ষা, সৌরশক্তিসহ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, উদ্যোক্তা তৈরি, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে পুঁজি পেতে সহায়তা করার সুপারিশ করেন। তাঁর মতে, মৎস্য শ্রমজীবীদের বৃহত্তর কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে প্রশাসনের সহায়তা ও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক এম রেজাউল করিম চৌধুরী সমুদ্রে যাওয়ার আগে জেলেদের নিবন্ধনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। নিবন্ধন নেই বলে সমুদ্রে মারা গেলে জেলেদের আর কোনো হিসাব থাকে না।

বিলসের উপদেষ্টা নাইমুল আহসান এই খাতের মৎস্যজীবী নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা, রেশনিং ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার বিষয়ে গুরুত্ব দেন।